১৩ বছর নৌকায় বসবাস মা-ছেলের
বউয়ের সঙ্গে বনিবনা হয়নি। কারণ তার মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণ ঝগড়া করতেন। তাই পরিবার ছেড়ে ১৩ বছর ধরে মাকে নিয়ে নৌকায় বসবাস করেন নুরু মিয়া। জীবিকা নির্বাহ করতে নদীতে মাছ ধরেন। মাছ বেচে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই চলে মা-ছেলের সংসার।
নুরু মিয়ার মায়ের নাম গোলাপী। বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই। তবে পাননি সরকারি কোনো সুবিধা। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ধরনা দিয়েও কোনো কাজ হয়নি। তাই এখন আর কারো কাছে যান না। তারা শরীয়তপুর জেলার ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নের ভোটার। কিন্তু নৌকাই এখন তাদের একমাত্র বাসস্থান।
বিজ্ঞাপন
৬০ টাকা দরে জমির লোভে গোলাপীকে বিক্রি করে দেন তার আপন চাচা। স্বামীভক্ত গোলাপী স্বামীর নাম মুখে নেওয়া অন্যায় মনে করেন। তাই নামটি মুখে নেন না।
জয়ন্তী নদীর পাড়ে কথা হয় জীবনে কখনোই সুখ না দেখা গোলাপীর সঙ্গে। তিনি বলেন, জীবনের পুরোটা সময় কেটেছে দুর্দশার মধ্যে। আমার বাবা কুমিল্লায় অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। নিজের চাচা জায়গার জন্য আমাকে বিক্রি করে দেন ছোটবেলায়। ৫০-এর প্রথম গন্ডগোল আমি স্বচক্ষে দেখেছি। অনেক ইতিহাস মনে আছে। যুদ্ধের সময় আমি আমার স্বামীকে নিয়ে নদীতে ছিলাম। স্বামী মারা যাওয়ার পর এখনো সেই নদীই আমার ঠিকানা।
গোলাপী বলেন, আমি ঢাকায় এক বস্তিতে ছিলাম। ছেলে আমাকে জোর করে গাঁয়ে নিয়ে আসে। আসার পর থেকে ছেলের বউ আমাকে দেখতে পারে না। বেশ কয়েকবার এটা নিয়ে দরবার-সালিস হয়। পরে ছেলে আমাকে নিয়ে থাকা শুরু করে নৌকায়। ছেলে এই নৌকা দিয়ে মাছ ধরে। যা রোজগার হয়, তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে মা-ছেলের। যদি মাছ না পায়, তাহলে না খেয়ে থাকি। এ ছাড়া উপায় কী আর। কারো কাছে যাই না।
স্থানীয় বাসিন্দা লাবু সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেকবার দেখা করার জন্য গিয়েছি নুরু মিয়ার স্ত্রীর কাছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তার স্ত্রী তাকে নিয়ে থাকবে না বলে জানান।
নুরু মিয়া বলেন, মা ঢাকা থেকে আসার পর বউয়ের সঙ্গে বনিবনা হয় না। সবসময় মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। কখনো কখনো তাকে মারার জন্য তেড়ে আসত। আমি বাড়িতে থাকতাম না, কাজে চলে যেতাম। এলে মা কাঁদতে কাঁদতে বলতেন, আমাকে যেখান থেকে এনেছিস, সেখানেই রেখে আয়। তাহলে তুই ভালো থাকবি।
নুরু আরও বলেন, আমি অনেক বুঝিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সালিস হয়েছে। কিন্তু বউ কিছুই মানে না। পরে মাকে নিয়ে নিজের টাকা দিয়ে বানানো নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। আর বাড়ি যাইনি। এখন নৌকায় মা-ছেলে থাকি। আমি মাছ ধরি। মাছ দিয়েই সংসার চলে। মাছ না পেলে না খেয়ে থাকি।
সরকারি কোনো সুবিধা পান কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বার আর গণ্যমান্য ব্যক্তি― কেউ বাকি নেই, যার কাছে যাইনি। এখন আর কারো কাছে যাই না। তারা মুখ দেখে দেখে দেয়। আমরা গরিব মানুষ। কেউ কিছু ব্যবস্থা করে দেয় না।
ডামুড্যা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন আর কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। অনলাইনে আবেদন করলেই হয়। আমি গোলাপীর ব্যাপারে জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।
এনএ/জেএস