বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ ইউনিয়নের রামেরকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র হৃদয় (ছদ্মনাম)। অবরোধ শুরুর দিন থেকেই স্থানীয় এক প্রভাবশালীর প্ররোচনায় মাছ শিকার করতে জাল ফেলে কীর্তনখোলা নদীতে। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় প্রশাসনের অভিযানে আটক হয় হৃদয়।

শুধু হৃদয় নয় ওই রাতে দুটি অভিযানে আটক হওয়া ৬ জনের মধ্যে একজন পেশাদার জেলে। বাকি চারজনই মৌসুমি জেলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে মাছ শিকারে নামেন এসব মৌসুমি জেলেরা।

আটক ছয় জনের মধ্যে কাউনিয়া থানার চুরামত এলাকার রহমান মৃধার ছেলে আজিজুল মৃধা (২৭), মোতাহার মৃধার ছেলে রুবেল মৃধা (৩০) ও চরকাউয়া এলাকার মানিক মজুমদারের ছেলে আরাফাত মজুমদারকে (২৬) এক বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান।

দণ্ডিত আজিজুল মৃধার পিতা রহমান মৃধা বলেন, আমার ছেলে ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পুত্রবধূ সন্তানসম্ভবা। দুই মাস আগে আজিজুল বাড়িতে আসে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর জন্য। ফলে হাতেও বিশেষ কোনো কাজ ছিল না। এজন্য স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে জোট হয়ে নদীতে জাল ফেলেন। পরে পুলিশের হাতে আটক হন।

নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ শিকার করায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তার এমন কর্মকাণ্ডে আমাদের পুরো পরিবারই বিপদে পড়েছি। এখন তাকে এক বছর কারাভোগ করতে হবে। বারবার তাকে আমি নিষেধ করেছি এসবে না যেতে। কিন্তু আমাদের এলাকার অনেকে এভাবে কারেন্ট জাল ফেলে মাছ ধরে। সে-সব দেখেই ছেলে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

রহমান মৃধা বলেন, কারেন্ট জাল ব্যবহারকারীদের আটকের চেয়ে কারেন্ট জাল উৎপাদন এবং যে পথে আসছে তা বন্ধ করা জরুরি।

আজিজুল মৃধার সঙ্গে দণ্ডিত রুবেল মৃধা বলেন, এলাকার অনেকেই নৌকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে। সেসব দেখে আমরাও ৩/৪ দিন হলো নদীতে নেমেছি। আজকে আটক হয়ে দণ্ডিত হলাম। খুব কষ্ট লাগছে। আমার পরিবারে আমি ছাড়া রোজগারের কেউ নেই।

ওদিকে মুচলেকায় মুক্তি পাওয়া অপর তিন অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরের মধ্যে হৃদয় জানিয়েছে, এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন মাছ ধরে দিলে টাকা দিত। এজন্য আমরা মাছ ধরতে যাই।  

মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ১২ অক্টোবর একদিনে বিভাগে বিভিন্ন স্থানে ১০৭টি অভিযানে ২০ জন দণ্ডিত হয়েছেন। এ সময়ে ৫৬ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। কয়েকটি অভিযানিক টিমের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, পেশাদার জেলেদের তুলনায় অবরোধকালীন সময়ে মৌসুমি জেলেরাই নদীতে নামেন বেশি। আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ পেশাদার জেলে। বাকিরা সবাই মৌসুমি।

আটককৃতদের বরাত দিয়ে এসব অভিযানিক দল দাবি করেছেন, এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট মাছ শিকারে কাজ করছে। এর পিছনে প্রভাবশালী ও অনেক স্থানে জনপ্রতিনিধিও রয়েছে।  

মৎস্য অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, স্থানীয় প্রশাসন নৌ-পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে মৎস্য অফিস বিভাগের ৬ জেলায় মা ইলিশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। যারা ইলিশ শিকারের জন্য নদীতে নামছেন তাদের আইনেরও আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইলিশ প্রজনন সংরক্ষণে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের আহরণ, পরিবহণ, মজুত, বাজারজাতকরণ এবং বেচাকেনা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএএ