‘স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হবে এটা একমাত্র বাংলাদেশেই আছে’
স্কুলে শিক্ষার্থীদের বেতন দিতে হবে এটা একমাত্র বাংলাদেশেই আছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। পটুয়াখালীর দশমিনায় টেস্ট পরীক্ষার ফি পরিশোধ না করায় শিক্ষকের বকাঝকা ও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে তন্ময় চক্রবর্তী (১৫) নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, স্কুলগুলো বেতন নেবে কেন? আমি তো সরকার হিসেবে ব্যবস্থা করব, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্যবস্থা করব, যাতে এই বেতনই আস্তে আস্তে কমিয়ে দেওয়া যায়। একটা স্কুল এমপিও করার মধ্য দিয়ে সরকার কী পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে শিক্ষকদের। তারপরও এত টাকা লাগবে কেন? আপনি সব জায়গা যদি কন্ট্রোল করতে না পারেন তাহলে দশমিনার মতো আরও ছেলে আত্মহত্যা করবে। তবে এখান থেকে বের হতে একমাত্র সরকারই যদি একটা জাগরণ গড়ে তোলে, তাহলে মুক্তি পেতে পারি।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে স্কাউটস ট্রেনিং সেন্টার মাঠে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল একাডেমি বনাম কালিয়াকৈর উপজেলা ফুটবল একাডেমি মধ্যকার ফুটবল খেলার আগ মুহূর্তে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, পটুয়াখালীর দশমিনায় যে ছাত্রটা বেতন দিতে না পেরে অপমানবোধ থেকে সুইসাইড করল, মারা গেল ছাত্রটা। এটা শুধু আলাদা ঘটনা ভাবলে হবে না, এ রকম ঘটনা আরও ঘটে। এমন একটা দেশে জন্মেছি এই দেশে প্রতি বছরই ভর্তি হতে হয়। ভর্তির জন্য টাকা দিতে হয়। আপনি স্কুলে যাবেন, স্কুল তো পুরা একেবারে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। আপনি তো ৬ষ্ঠ শ্রেণিতেই ভর্তি হলেন। আপনি কি জানেন, সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হতে হয়, অষ্টম শ্রেণিতেও ভর্তি হতে হয়। মানে আপনার স্কুলেই আপনি প্রতি বছর ভর্তি হবেন, এটার জন্য আপনি টাকা দেবেন, এগুলো রাষ্ট্রের দায়। রাষ্ট্র যদি ভালোভাবে থাকতো, তাহলে কোনো দিন রাষ্ট্রের একজন নাগরিক টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না, বেতন দিতে পারে না, স্কুলে থাকবে না- এমন হতো না।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে আমরা কতটা আলাদা। বিদেশে কখনো কারও এ চিন্তাই করা লাগে না, যে বেতন দিতে হবে। এই কনসেপ্ট একমাত্র বাংলাদেশেই আছে আমাদেরকে বেতন দিতে হয়, বেতন না দিলে বের করে দেওয়া হয়। একটা এলাকায় কত সফল মানুষ থাকে, তারা চাইলে কিন্তু অনেক মানুষকে বেতন দিতে পারেন। অনেক মানুষকে সহযোগিতা করতে পারেন।
ব্যারিস্টার সুমন বলেন, সারা দেশ ঘুরে ফুটবল খেলে আমি মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের গড়ার বার্তা দিচ্ছি। বেশ সাড়াও মিলছে।
তিনি বলেন, আমরা দলমত নির্বিশেষে অনেক বেশি বিভক্ত হয়ে গিয়েছি। আমাদের রাজনৈতিক কারণে হোক, ধর্মীয় কারণে হোক আমরা একজনের অনুষ্ঠানে আরেকজন যেতে চাই না। কিন্তু একমাত্র ফুটবল বা স্পোর্টস যেখানে আছে, সেখানে সব ধরনের মানুষ, সব ধর্মের মানুষ, সব দলের মানুষ একত্রিত হয়। কোনো এক জায়গায় গিয়ে বাংলাদেশের কথা বলবেন সব মানুষ কিন্তু একত্রিত হয় না। ফুটবলটা আমি দেখলাম অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা, অথচ দুখের বিষয় এই ফুটবলটাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। এই ফুটবলটাকে আমি ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি থাকি না থাকি, রাজনৈতিকভাবে আমার অবস্থান থাকুক না থাকুক, কিন্তু একটা জায়গা দিয়ে যাচ্ছি। যে জায়গায় আপনি বাংলাদেশের সব জায়গার মানুষকে পাবেন, সব দলের মানুষকে পাবেন। সেখানে আপনি বাংলাদেশের কথা বলতে পারবেন। আর বাংলাদেশের কথা যদি বলতে না পারেন, শুধু যদি আপনি আপনার দলের কথা বলেন, তাহলে তো আপনার দলের মানুষকে শিক্ষিত করলেন, আপনার দলের মানুষকে আপনি এগিয়ে নিয়ে গেলেন। আপনার দলের মানুষকে আপনি সচেতন করলেন। কিন্তু আপনার দলের বাইরেও তো মানুষ আছে। তাদেরকে আপনার বাংলাদেশের কথা শুনাতে হবে, বাংলাদেশের উন্নয়নের গল্প শুনাতে হবে। বাংলাদেশে কী কী সমস্যা আছে এগুলো শুনাতে হবে।
ব্যারিস্টার সুমন আরও বলেন, আমাদের পরবর্তী জেনারেশন তারা কিন্তু পুরোটাই কম্পিউটার বেজড। এরা ফোন ছাড়া কিন্তু ফিজিক্যালই প্রতিবন্ধী। এখান থেকেও ফিরিয়ে আনতে তাদের মাঠে আনতে হবে। আপনি শুধু শ্লোগান দেবেন মাদক দূর করুন, মাদক থেকে বেরিয়ে আসুন। কিন্তু বেরিয়ে এসে এরা কী করবে, কী করলে মাদকে যাবে না। অথচ ফুটবল মাঠের মধ্যে আপনি বাণিজ্য মেলা দিচ্ছেন, ফুটবল মাঠে হাট-বাজার ইজারা দিচ্ছেন। এর মানে আস্তে আস্তে ফুটবল মাঠ দখল হয়ে যাচ্ছে। কিছু দিন পরে আপনি হয়তো ইন্ডাস্ট্রি পাবেন, আপনি উন্নয়ন পাবেন, কিন্তু মানুষ পাবেন না বসবাস যোগ্য এই দেশটা পাবেন না। আমার কাছে মনে হয়েছে এই বার্তাটা পরিষ্কার। বাংলাদেশের জন্য এই ফুটবল মাঠেই একটা নতুন বাংলাদেশ, একটা নতুন ফুটবল গড়ে তুলতে হবে।
ফুটবল খেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাজওয়ার আকরাম, কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুরাদ কবির মুরাদ প্রমুখ।
আরএআর