চলাচলের কোনো রাস্থা না থাকার পরও দুই গ্রামের মাঝে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। দেড় বছর আগে সড়ক ছাড়াই সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। তাই ব্রিজ থাকলেও সংযোগ সড়কের অভাবে সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীর ওপর সড়কবিহীন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি।

স্থানীয়রা জানান, জায়লস্কর ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদীর ওপর ওমরপুর ও উত্তর জায়লস্কর গ্রামের সংযোগ স্থাপনে সেতুটি তৈরি করা হয়। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটি কোনো কাজে আসছে না। জনগণের ব্যবহার ও চাহিদার গুরুত্ব বিবেচনা না করে এ সেতু নির্মাণের ফলে সরকারি অর্থের পুরোটাই অপচয় হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা এমদাদুল হক বলেন, ওমরপুর, উত্তর জায়লস্করসহ তিন গ্রামের মানুষের যাতায়াত সিলোনীয়া বাজার ঘিরে। এখানে বাজার, শহরে যাতায়াত ও যোগাযোগের পরিবহনগুলোও সিলোনীয়া বাজার ঘিরে। কিন্তু কোটি টাকা খরচ করে এ পথে ব্রিজ তৈরির কোনো প্রয়োজন ছিল না। একই নদীর ওপর সামান্য দূরত্বে আরও ৪টি ব্রিজ আছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হক ট্রেডার্স। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বরে প্রথম মেয়াদ শেষ হয়। ২০২৩ সালে সেতুটির কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে।

অধিগ্রহণের বিষয়ে স্থানীয় ভূমি মালিক আবুল খায়ের বলেন, গত ৬-৭ মাস আগে আমাদের কাছ থেকে কাগজপত্র নেওয়া হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত টাকা বা কোনো নির্দেশনা দেয়নি।

রাশিদুল ইসলাম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ওমরপুর এলাকা থেকে বর্তমান রাস্তা ব্যবহার করে শহরে যাতায়াতে যে সময় লাগবে, এই সেতু ব্যবহার করে যেতে সময় লাগবে দ্বিগুণ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর জায়লস্কর গ্রামের এক অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বলেন, ব্যক্তির পকেট ভারী করার জন্য এই সেতু, এখানে মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাহিদা কিংবা প্রয়োজনের কোনো মূল্য নেই।

সেতু নির্মাণের আগে উপযোগিতা যাচাইয়ের বিষয়ে এলজিইডি ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক ঢাকা পোস্টকে জানান, সেতু নির্মাণের আগে উপযোগিতা যাচাইয়ে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেওয়ার পরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আমি ফেনীতে যোগদান করেছি বেশিদিন হয়নি। সেতুটি সম্পর্কে তেমন অবগত নই। তবে সেতুটি ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংযোগ সড়ক বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, সংযোগ সড়কের জন্য দুইপাশে প্রায় ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৪ শতাংশ জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেলে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের একটি দল সেতুটি পরিদর্শন করেছেন।

তারেক চৌধুরী/এএএ