গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, এবার রাতে নয়, দিনের বেলায় ভোট ডাকাতির আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে তারা আরপিও সংশোধন করেছে। যাতে ভোট ডাকাতি জায়েজ হয়। এদিকে আন্দোলন-সংগ্রাম দমন করতে অত্যাবশকীয় পরিষেবা আইন ও ডিজিটাল থেকে সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নানা রকমের আইনি পরিবর্তন তারা করছে এবং করতে থাকবে।

শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর শীববাড়ী মোড়ের অদূরে মো. শহীদুল ইসলাম অডিটরিয়ামে ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রতিষ্ঠার লড়াই-সংগ্রামের ২১ বছর এবং রাজনৈতিক দলের ৮ বছর উপলক্ষ্যে গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটি এ সভার আয়োজন করে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, প্রধাানমন্ত্রী আবার যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। অন্যদের নিষেধ করে নিজেই আটলান্টিক পাড়ি দিয়েছেন। এই মুহূর্তে এত বেশি বিদেশ সফর কতটা দেশের পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থে আর কতটা নিজের গদি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তা মানুষ বুঝে গেছে। এই সরকার নিজের গদি টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশকে নিয়ে বাজি ধরছে।

তিনি বলেন, আজকে মানুষকে মাঠে নামতে হবে। বাংলাদেশের কঠিন সময়ে আপনারা যদি বিভ্রান্ত হন, তাহলে আপনারা সময়ের যে দাবি, সেখান থেকে বহুদূরে সরবেন। এ দেশের ধ্বংসের জন্য আপনারাও দায়ী থাকবেন। কাজেই আমরা জনগণকে বলবো, আপনারা রাজপথে নামার প্রস্তুতি নেন। আমরা বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে নেই। আমরা বাংলাদেশের মানুষের দিকে তাকিয়ে আছি। বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের আগামী ভবিষ্যৎ তৈরি করবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার নাকি সভা সমাবেশে কোনো বাধা দেয় না, তারা নাকি এই দেশে আইনশৃঙ্খলা, শান্তি খুব বজায় রেখেছে, তারা নাকি একটি সুষ্ঠু ভোট করবে। এসব কাজের পরে সারা দুনিয়ায় তারা যখন মাথা হেইট করে, বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আসে, তখন আবার আওয়ামী লীগ আবদার করে, আমরা কেন তাদের পক্ষ নিচ্ছি না, দেশের পক্ষ নিচ্ছি না। আমেরিকা কিংবা অন্যরা বাংলাদেশকে নানাভাবে চাপ দিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার, সভা-সমাবেশের অধিকার কেড়ে নিয়ে এখন যখন বিশ্বের কাছে মাথা হেইট করেছেন, তখন এসে বলেন, সবাই মিলে সরকারকে সমর্থন করতে। আপনাদের এসব ভন্ডামি দেশের মানুষ পরিষ্কার করে দিয়েছে। আপনাদের এসব ভন্ডামি মানুষ আর গ্রহণ করবে না।

মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক ও পরিচালককে ‘ফরমায়েশি’ সাজা দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, সব কিছু নিপীড়নমূলক হলেও মানুষের শেষ ভরসা থাকে আদালত। এ সরকার পুরো আদালতকে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনের হাতিয়ার করে রেখেছে।

সভায় বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রকাশিত রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ৩১ দফা বিএনপি বা গণসংহতি আন্দোলনের দফা নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশের জনগণেরই ৩১ দফা। এই দফা বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো বদলের দফা, রাষ্ট্র মেরামতের দফা। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র মেরামতের জন্য জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বাধীন গণসংহতি আন্দোলন কঠিন এক সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আমাদের সম্মিলিততভাবে এই সংগ্রাম আরও শাণিত, আরও ধারালো করতে হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সদস্য আল আমিন শেখ। সভায় বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, গণসংহতি আন্দোলন খুলনা জেলার সদস্য সচিব কামরুজ্জামান টুকু, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. অলিয়ার রহমান শেখ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) খুলনা মহানগরের সভাপতি খান লোকমান হাকিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শেখ আবদুল হালিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সাতক্ষীরা জেলার সংগঠক এসএম আলফাত হোসেন, খালিশপুর-দৌলতপুর জুটমিল যৌথ কারখানা কমিটির সভাপতি ও সিবিএর সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন মনি, নওয়াপড়া পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসেদ আলম শমসের, দৌলতপুর জুটমিল কারখানা কমিটির সভাপতি নূর মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মো. মোফাজ্জেল হোসেন, প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক নেতা মো. নূরুল ইসলাম, ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক নেতা মোশারেফ হোসেন, শামসুজ্জোহা ডিয়ার, সামস সারফিন সামন প্রমুখ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্য খুলনা মহানগরের সদস্য সচিব কাজী মোতাহার রহমান বাবু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির খুলনা জেলা সম্পাদক কে এম আলীদাদ প্রমুখ।  

মোহাম্মদ মিলন/আরএআর