‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের একটা ঝুঁকি। আমাদের জন্য বিপজ্জনক একটা প্ল্যান। বিপজ্জনক জিনিস আপনাদের জানানো দরকার। আমি মনে করি সকলকে জানিয়ে দেওয়া এটা আমার কর্তব্য।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) বিকেলে নীলফামারী কেন্দীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জেলা জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জিএম কাদের বলেন, রূপপুর পারমাণিবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে ১১ বিলিয়ন ডলার স্টেমেট করা হয়েছিল। ১ বিলিয়ন মানে ১০০ টাকা ডলার হলে ১০ হাজার কোটি টাকা। ১ লাখ দশ হাজার কোটি টাকা। এটার ক্যাপাসিটি হলো ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। কিন্তু ভারতে ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে খরচ হয় ৫ বিলিয়ন ডলার। তার থেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। এই নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে যদি দুর্ঘটনা হয়, এটা হবে ভয়ংকর এক্সিডেন্ট। রাশিয়ায় নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বসতি স্থাপন করতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা পারমাণবিক শক্তি নয় পারমাণবিক বিপর্যয় নিয়ে আসতেছি। যদি দুর্ঘটনা হয়, হতেই পারে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যখন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তখন পারমাণবিক বিদ্যুৎুকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কারণ এর নিয়ন্ত্রণ করবে দেশের বাহিরের প্রকৌশলীরা। প্রজন্মের জন্য আমরা অত্যন্ত একটা বিপন্ন অবস্থা দিতে যাচ্ছি। কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই।
জিএম কাদের বলেন, পদ্মা সেতু হয়েছে। যদিও বলা হয় এটা আমাদের নিজস্ব বাজেটে হয়েছে। এটি করতে আমাদের ট্যাক্সের টাকা শেষ হয়ে যায়। আমরা উন্নয়ন বাজেট করি সম্পূর্ণ ধার করে। ব্যাংকের টাকা ধার করি, বিদেশ থেকে ধার করি। বিদেশের ধারের সুদ প্রায় অর্ধেকের মতো। বেশি সুদে পয়সা নিয়েছি, তিন গুণ দাম খরচ করেছি পদ্মা সেতুতে। বলা হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে অথচ জনগণের অর্থ ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে। জনগণ ট্যাক্সের টাকা দেয়, সেই টাকা টাকা দিয়ে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের টাকা আমাদের শোধ করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষ, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। এটা দেখার জন্য আমাদের কেউ ছিল না। দেশের নেতৃত্বে যারা থাকতেন তাদের মধ্যেও উত্তরবঙ্গের মানুষ কোনো বড় জায়গায় খুব একটা যেতে পারেনি। সেখানে আমাদের নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রথম এসেছিলেন। তখন অনেক মানুষ আশা করেছিল এরশাদ সাহেব আমাদের ছেলে আমাদের সন্তান, আমাদের দিকে দেখবেন। আমাদের সকল সমস্যা তিনি সমাধান করবেন। এই আশা ভরসা যেমন মানুষ করেছিলেন সেই আশা ভরসা পূরণে উনি চেষ্টা করেছিলেন। আপনারা হয়তো সকলে দেখেছেন উনি এসে সারাদেশের উন্নয়ন করেছেন ও উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে হাত দিয়েছেন। উনি চিহ্নিত করেছিলেন আমাদের মানুষ কেন অবহেলিত। কেন উত্তরবঙ্গের মানুষ পিছিয়ে থাকে। দেখা গেল যে আমাদের এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি যখন ছোট ছিলাম আমাদের এখানে বৃহত্তর কুমিল্লা বৃহত্তর ফেনীসহ অন্যান্য জেলা থেকে মানুষ আসতো কাজ করার জন্য। আমাদের এখানে অনেক ছোট ছোট কাজ করতো। আগে এখানকার মানুষ নিজেই সমৃদ্ধ ছিল, চাকরি করতে বাহিরে যেত না। কিন্তু মানুষের সংখ্যা যখন বাড়তে থাকে তখন দেখা গেল কৃষি কাজের নির্ভর করে মানুষ আর স্বাবলম্বী হতে পারল না। পরিবারের সদস্য বেড়ে গেল। তখন তারা ক্ষুদ্র জমির মালিক হয়ে গেল। তারা গরিব হয়ে গেল।
জিএম কাদের বলেন, আমাদের তখন দরকার ছিল চাকরির, দরকার ছিল ব্যবসার। কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ আসেনি কেন এরশাদ সাহেব সেটা বের করার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর এরশাদ সাহেব যারা উত্তরবঙ্গের মানুষ তাদের সরকারের নীতি নির্ধারক পদে পোস্টিং দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। উনি অনেকের জন্য অনেক কিছু করেছেন। কক্সবাজার চট্টগ্রামের জন্যও করেছেন। উনি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের জন্য করেছেন। এরশাদ সাহেব যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎসহ নানা উন্নয়ন কাজ করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পর উনি যমুনা সেতুর বন্দোবস্ত করেছিলেন, পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়েছিল। ফলে এখানকার মানুষের মধ্যে আসার সঞ্চার হয়েছিল। এ কারণে আমাদের সম্পদ আমাদের উৎপাদিত কৃষি সারাদেশে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। তরি তরকারির দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, আপনাদের সন্তান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দীর্ঘদিন আপনাদের জন্য কাজ করে গেছেন। এরশাদ সাহেব যখন জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করলেন তখন উত্তরবঙ্গের মানুষ বলতেন এটা আমাদের দল। সারাদেশে জাতীয় পার্টি আছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষ এখনো মনে করে জাতীয় পার্টি আমাদের দল। যে দল আমাদের জন্য কাজ করেছে।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুবিবুল হক চুন্নু , কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর মাসুদ, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাজমা আক্তার, আলমগীর সিকদার লেপটন, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, ভাইস চেয়ারম্যান আদেলুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, জেলা জাতীয় পাটির সদস্য সচিব সাজ্জাদ পারভেজ, যুগ্ম আহ্বায়ক সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক, রশিদুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শরিফুল ইসলাম/আরএআর