ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবনে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট ময়মনসিংহ বার ইউনিট আয়োজিত পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশ চলাকালে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা তাদের বাধা দিলে এবং হৈচৈ শুরু করলে এ হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার তৈরি হলে ভবনটির পেছনের দরজা দিয়ে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে যায় কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বৃষ্টিতে ভিজে তারা সমাবেশ করে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি, লুণ্ঠিত ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ বিভাগীয় আইনজীবীদের পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্ট। এতে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা ও কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে আইনজীবীরা অংশ নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুপুর ১টায় জেলা আইনজীবী সমিতি থেকে পদযাত্রা বের হয়ে নগরীর কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে গঙ্গাদাশ গুহ রোডের বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দিনভর বৃষ্টির কারণে বেলা সোয়া ২টার দিকে আইনজীবী সমিতির শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভবনে সমাবেশ শুরু করে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তবে সেখানে সমাবেশ করতে নিষেধ করছিল জেলা আইনজীবী সমিতি।

কিন্তু সমিতির নিষেধাজ্ঞা না মেনে সেখানেই সমাবেশ শুরু করে বিএনপিপন্থীরা। এতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নূরুল হকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন। এছাড়াও প্রধান সমন্বয়ক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সদস্য সচিব সুব্রত চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে তিনজন নেতার বক্তব্য শেষ হতেই আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের একটি দল ভেতরে প্রবেশ করে সভা করতে নিষেধ করে স্লোগান শুরু করলে হট্টগোল শুরু হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয় এ সময়। সেখানে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীরের নেতৃত্বের ছাত্রলীগের একটি দলও যুক্ত হয় আইনজীবীদের সঙ্গে।

বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগপন্থীরা পিছু হটে। তবে গেটের বাইরে গিয়ে ফের দুই দফা হামলার চেষ্টা চালায়। ওই সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনজীবী সমিতির ভবনটির সামনের গেটে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী, ছাত্রলীগ ও পুলিশ অবস্থান নিলে পেছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে তারা বৃষ্টিতে ভিজে নগরীর টাউনহল এলাকা দিয়ে মিছিল নিয়ে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে। বিএনপিপন্থীরা সরে গেলে আইনজীবী সমিতির ভেতর আওয়ামী লীগপন্থীরা দখলে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। ছাত্রলীগের একটি দলও ভেতরে মিছিল করে।

অপরদিকে বৃষ্টিতে ভিজে পদযাত্রা শেষে সমাবেশে কেন্দ্রীয় ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা ও কিছু আইনজীবী একত্রিত হয়ে আমাদের পদযাত্রা শুরুর সময় হামলা করা হয়েছে। এই হামলা করে কোনোদিন কোনো আন্দোলন ঠেকানো যায় না। এই সরকারের পতন হবেই ইন-শা-আল্লাহ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির জন্য আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। এবারের আন্দোলন হচ্ছে আইনজীবী জনতার একত্রিত হওয়ার আন্দোলন। এই আন্দোলন বৃথা যাবে না।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. নূরুল হক বলেন, বাইরের কয়েকজনকে দিয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা সে ঘটনা প্রতিহত করে সমাবেশ ও পদযাত্রা সফল করেছি।

ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশ আছে আদালত প্রাঙ্গণে কোনো মিটিং-মিছিল করা যাবে না। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দু’বার নিষেধ করা হয়। তা জানা স্বত্বেও আইনজীবী সমিতির অনুমতি ছাড়া অবৈধ ভাবে জামায়াত-বিএনপি চক্র মাইক বাজিয়ে মিটিং করে, যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আইনমত তারা মিটিং-মিছিল করতে পারে না। ফলে সাধারণ আইনজীবীরা ফুঁসে উঠে তাদের (বিএনপির) মিটিং পণ্ড করে দিয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতিতে জামায়াত-বিএনপির মিছিল-মিটিং করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ বলেন, আইনজীবী সমিতিতে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নিষেধ করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরবর্তীতে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পেছনের দরজা দিয়ে পদযাত্রা নিয়ে বের হয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের মাধ্যমে তাদের কর্মসূচি শেষ করে। এ ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

উবায়দুল হক/এএএ