নিরাপদ আশ্রয়ে খোঁজে একটি পরিবার

তিস্তার উৎপত্তি স্থল ভারতের সিকিম। প্রবল বৃষ্টির কারণে উত্তর সিকিমের প্রাকৃতিক লেকে ফাটল ধরে পানির চাপ বেড়ে আঘাত হানে চুংথাম বাঁধে। পানির চাপে বাঁধ ভেঙে সে পানি তিস্তায় দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তিস্তার পানির স্তর প্রায় ১৫-২০ ফুট বেড়ে গেছে বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে। ভারতীয় সেই ঢলে তিস্তা নদী দিয়ে পানি হু হু করে ঢুকছে দেশে। ফলে তিস্তায় পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এ দিকে তিস্তা তীরবর্তী মানুষজন ঘরবাড়িসহ গবাদি পশু নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয়ে ও আশ্রয়কেন্দ্রে। ভারতীয় ঢলে তিস্তার পানি আকস্মিকভাবে বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি দ্রুত বাড়ায় রংপুর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিকেলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও নামমাত্র কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে প্রতিবারের মতো এবারও পাউবোর পক্ষ থেকে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে তা খুব একটা কাজে আসছে না। পানি বেড়ে অনেক রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে যে কোনো সময় তিস্তা তীরবর্তী এলাকার রাস্তা ভেঙে শহরে পানি ঢুকে যেতে পারে।

এ দিকে তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে লালমনিরহাটে কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, আদিতমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। মাথা গোঁজার আশ্রয় হারিয়ে উঁচু বাঁধে মানবেতর সময় কাটছে হাজারো মানুষের। বিকেলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তা পাড়ের অনেক মানুষ। স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা, ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

তিস্তা পাড়ের আজাহার আলী বলেন, রাস্তার ঘরবাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে আছি। এর মধ্যে বৃষ্টিতে সব জিনিসপত্র ভিজে গেছে। তিস্তা পাড়ের মানুষের কষ্টের কোনো শেষ নেই। তাই দ্রুত তিস্তার যে সমস্যা আছে সেটি সমাধানের দাবি জানান।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা জানান, আশা করা হচ্ছে রাতেই পানি কমে যেতে পারে। পানি কমে গেলে তিস্তা পাড়ের মানুষরা আবারও ঘরে ফিরে যেতে পারবেন বলে আশা রাখছি।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএএ