আশুলিয়ায় এক পরিবারের ৩ জন খুন, মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনেরা
ঢাকার আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও ছেলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তাদের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে শোকের মাতম। সাভারের আশুলিয়ার জামগড়ায় বহুতল ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এখন মরদেহের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন নিহতের স্বজনেরা।
নিহত তিনজন হলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের গরুড়া (ফুলবাড়ী) গ্রামের মৃত শহির উদ্দীন মুন্সী ছেলে মুক্তার হোসেন বাবুল (৪৮), তার স্ত্রী শাহিদা বেগম (৩৫) ও তাদের ছেলে মেহেদী হাসান জয় (১২)। স্বামী-স্ত্রী দুইজনই আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন।
বিজ্ঞাপন
রোববার (১ অক্টোবর) নিহতদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। একসঙ্গে ভাই, ভাতিজা ও ভাবিকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ বাবুলের ভাইয়েরা।
জানা যায়, বাবুলের বাবা মৃত আব্দুল হালিম গ্রামের মসজিদের ইমাম ছিলেন। তারা চার ভাই ও তিন বোন। বাবুল ছিলেন সবার ছোট।
আরও পড়ুন : বিছানায় পড়েছিল মা-ছেলের মরদেহ, পাশের ঘরে বাবার
নিহত বাবুলের স্কুলজীবনের বন্ধু ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. মান্নান বলেন, ‘বাবুল অভাব-অনটনে বড় হয়েছে। তার বাবা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম ছিলেন। ২০ বছর আগে তিনি মারা যান। এরপর মা মারা যান। ওই সময় বাবুল এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ঢাকায় চলে যায় কাজের সন্ধানে। সেখানে গার্মেন্টসে কাজ নেয় বলে জানি। তবে ছোটবেলা থেকে সে শান্তশিষ্ট ও মিশুক প্রকৃতির ছিল।’
বাবুলের বড় ভাই ইউসুফ আলী বলেন, ‘২০০৩ সালে সুমি আক্তার নামে এক গার্মেন্টস কর্মীকে বিয়ে করে বাবুল। ২০০৭ সালে ওই ঘরে তাদের এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরপর বাবুলের ওই স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এরপর ২০০৮ সালে শাহিদা আক্তার নামে আরেকজনকে বিয়ে করেন বাবুল। তাকে নিয়ে ঈদ উৎসবে গ্রামে বেড়াতে আসতেন। ছয়-সাত দিন থেকে আবার ঢাকায় চলে যেতেন। ঢাকায় কারও সঙ্গে শত্রুতা ছিল কিনা জানা নেই। এখন আইনি প্রক্রিয়া শেষে আগামীকাল মরদেহ এলাকায় এসে পৌঁছাবে।
বাবুলের বড় ভাবি জুলেখা বেগম বলেন, আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া সন্তান মেহেদীকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে লালন করতেন শাহিদা। বিয়ের অনেক বছর পার হলেও তাদের ঘরে কোনো সন্তান আসেনি। গেল রোজার ঈদে তারা বেড়াতে এসেছিলেন। এ সময় ছেলে মেহেদীকে গ্রামের একটি বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে ভর্তি করিয়ে দিয়ে তারা দুজনে ঢাকায় চলে যান। কয়েক মাস পর মেহেদীও বাবা-মাকে দেখতে ঢাকায় গেলে সেখানে থেকে যায়। তার সঙ্গে প্রতিবেশীদের কখনো বিরোধ ছিল না।
আরিফ হাসান/আরকে