শ্রেণিকক্ষের টেবিলে লবণ-হলুদ-মরিচ, দপ্তরি হলেন বাবুর্চি
একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের টেবিলে চক-ডাস্টারের পরিবর্তে রাখা লবণ, হলুদ, মরিচ, গরম মশলা, সয়াবিন তেলসহ রান্নার নানা উপকরণ। টেবিলের এক প্রান্তে গ্যাসের চুলা, কড়াই আর চেয়ারে রাখা রাইস কুকার। স্কুলের দপ্তরি রান্নার জন্য তরকারি কাটছেন। আয়োজন দেখে মনে হতে পারে দাওয়াতের জন্য চলছে রান্নার প্রস্তুতি।
মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এমন আয়োজন চোখে পড়ে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানাধীন ডুমুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে। আর বাবুর্চির দায়িত্ব পালন করছিলেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি ফিরোজুর রহমান। এছাড়া ৩য় শ্রেণির জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে পাঠদানের পরিবর্তে রাখা হয় পাট। এটি পাটের গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হলে ভিডিওর কমেন্ট বক্সে সচেতন মহলের নিন্দার ঝড় ওঠে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, রান্নার কাজে ব্যস্ত স্কুলের দপ্তরি ফিরোজুর রহমান দুপুরের ডাল ভাত রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সরকারি বিদ্যুৎ খরচ করে রাইস কুকারে ভাত রান্না করছেন।
দপ্তরি ফিরোজুর রহমান জানান, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে প্রতিদিন তিনি রান্না করেন। স্কুলের শিক্ষকরা দুপুরে খাবার খান। আরেকটি শ্রেণিকক্ষে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোহেল মোল্যা পাট রাখেন।
ভিডিও ভাইরালের পর স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সোহেল মোল্যা ও প্রধান শিক্ষক চৌধুরী নাজির আহমেদের আয়োজনে বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালীন হরেক পদের খাবার রান্না করে পিকনিকের আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা খাবারের ঘ্রাণে তাদের জন্য পিকনিকের আয়োজন করা হচ্ছে ভাবলেও পরে জানতে পারে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকসহ বাকি শিক্ষক ও বহিরাগত কিছু লোকের জন্য ভুঁড়িভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা বিষয়টি তাদের পরিবারকে জানালে অভিভাবকরা শিক্ষদের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, স্কুলে গিয়েছিলাম স্যাররা পিকনিক করছে। আমাদের খেতে দেয়নি।
বাঐসোনা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য মেম্বার মো. কামরিল শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান শিক্ষকের শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে স্কুল চলাকালীন পিকনিক চলে শুনেছি। গতদিনও বাচ্চাদের সামনে পিকনিক করেছে। নিজেদের লোকজন নিয়ে খেয়েছে। প্রধান শিক্ষকের অনেক ক্ষমতা তাই আমরা কিছু বললেও তিনি আমলে নেন না।
ওই বিদ্যালয়ের পিটিএ কমিটির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, পিটিএ সভাপতির কি কাজ প্রধান শিক্ষক আমাকে আজও অবহিত করেনি। আমাদের অনেক সদস্যদের না জানিয়ে অনেক মিটিং হয়। আমাদের এই স্কুলে প্রতিনিয়ত অনেক অনিয়ম চলে। এখানে কিছুদিন পর পর ভালো ভালো রান্না হয়। শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়েই ভুরিভোজ চলে। এসব খাবার শিশুরা খেতে চায়, এটা স্বাভাবিক বিষয়। এছাড়া প্রতিদিন স্কুলের একটি কক্ষে রান্না হয়। এটাতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট না, এটা ওনাদের বুঝতে হবে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করে বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে এমন পিকনিক করা, সরকারি বিদ্যুৎ খরচ করে স্কুল কম্পাউন্ডে রান্না করার কোনো বৈধতা আছে কি না আমার জানা নেই।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. সোহেল মোল্যা বলেন, আমি যোগানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় ডুমুরিয়া প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা আমার কাছে খেতে চেয়েছেন। সেজন্য রান্নার আয়োজন করেছিলাম। স্কুলে রান্না করে খাওয়ার নিয়ম নেই এটা আমার জানা ছিল না।
ডুমুরিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চৌধুরী নাজির আহমেদ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, স্কুলে কোনো পিকনিক হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সৌজন্যমূলক খাবারের আয়োজন করেছিলেন।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে, সে খাবার তারা খেয়েছে। আমরা দপ্তরির রান্না করা খাবার খেয়েছি, এখানে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
কালিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) বাসুদেব কুমার সানা বলেন, স্কুলে পিকনিক বা নিয়মিত রান্না করে খাওয়ার কোনো অনুমতি নেই। এ বিষয়ে তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সজিব রহমান/আরকে