চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া বোনের ছেলেকে দেখতে গিয়ে ওসির বিরুদ্ধে মারধর, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ এনেছেন শিউলী খাতুন নামে এক নারী। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল মজিদের মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে শিউলী খাতুন অভিযোগ করেন, গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বোনের মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে ইমনকে একটি মামলায় গ্রেপ্তার করলে মা ও বোনসহ পরিবাররের কয়েকজন সদস্য থানায় দেখতে যান। ইমন মানসিক ভারসাম্যহীন এই বিষয়টি পুলিশকে বোঝাতে তার চিকিৎসাপত্র দেখাতে গেলে তা দেখতে অস্বীকৃতি জানায় পুলিশ। পরে ওসি ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দিয়ে সেখানে পড়ে থাকা সজনে গাছের ডাল দিয়ে বেধড়ক মারধর করান। 

তিনি বলেন, শিবগঞ্জ থানার ওসি চৌধুরী জোবায়ের আহমেদের নির্দেশে ও উপস্থিতিতে পুলিশ আমাকে, আমার বোন ও মাকে বেধড়ক মারধর করে। এতে আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয় এবং গুরুতর আহত হলে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুরোপুরি সুস্থ না হলেও আমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়ার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে আমি জামিনে মুক্ত হয়।

ওই নারী বলেন, আমার বোনের ছেলে ও মনাকষা বিশ্বনাথপুরের তোজাম্মেল হকের ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীম ইমনকে গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ আটক করে। এর আগে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে ফিরে আসে ইমন। তার বন্ধু শামীম দেখা করবে বলে ডাকলে সেখানে গেলে পুলিশ তাকে পূর্বের একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেপ্তার করে। 

শিউলী খাতুন বলেন, আমাকে মারধরের পরও পুলিশ ক্ষান্ত হয়নি। আমাকে হাসপাতালে থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় বিবস্ত্র হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ছাড় দেয়নি। আমরা এটার বিচার চাই। পুলিশ এটি অন্যায় করেছে। সুষ্ঠু তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানাই। একজন সেবাগ্রহীতা নারীকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো থানার মধ্যে এভাবে মারধরের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। 

তিনি আরও বলেন, পুলিশের ওপর আস্থা রেখে মানুষ বিচারের দাবিতে থানায় যায়। থানায় গিয়ে উল্টো এমন হামলা মারধর ও মামলায় পড়তে হলে পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা হারিয়ে যাবে। আশা করি পুলিশ সুপার মহোদয় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমাকে অন্যায়ভাবে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করেছে। আমি জামিনে মুক্ত হয়ে এসে এই সংবাদ সম্মেলনে বিচার দাবি করছি। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুলিশ এখনো আমাদেরকে নানা রকম ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছে।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে দেখতে এসে থানায় হট্টগোল করেন ওই নারী। এছাড়াও পুলিশকে গালিগালাজ করেন ও অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। এমনকি থানা চত্বরে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। এ সময় উপস্থিত জনতা ও পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। এতে শরীরে আঘাত পেলে পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা করায়।

ওসি আরও বলেন, থানা চত্বরের একটি আমগাছে আত্মহত্যার চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সেই মামলায় তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পুলিশের সাথে তাদের কোনো বিরোধ ছিল না। থানায় এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে ও তাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে পুলিশ ও উপস্থিত জনতা সহযোগিতা করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে শিউলী খাতুনের মা সালেহা বেগম, বোন রেখা রানি, বোনের মেয়ে মাসুমা, চাঁদনী, তামান্না, প্রতিবেশী মুনিরুল, রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর