পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা হলেও বছরে প্রায় ছয় মাস থাকেন পানিবন্দি। ঘরের উঠোনসহ চারপাশে পানি থাকার কারণে ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে শঙ্কায় থাকতে হয় বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে। চোখের আড়াল হলেই অবুঝ শিশুরা পানিতে পড়ে যায়। আর এসব জমে থাকা পানিতে বাড়ে মশার উপদ্রব।

গত এক মাসে একাধিকবার পানিতে পড়েছে শরীয়তপুরের নড়িয়া পৌরসভার নবগ্রাম এলাকার এক বছর বয়সী ফারিয়া ইসলাম রোকছনা ও দেড় বছরের জান্নাতুল ফেরদৌসসহ একাধিক শিশু। তবে ভাগ্যক্রমে ওইসব শিশুরা প্রাণে বেঁচে গেছে।

সম্প্রতি নড়িয়া পৌরসভায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌরসভার প্রধান সড়ক থেকে নবগ্রাম হয়ে ডাকবাংলা সড়ক ও বিহারী লাল উচ্চ বিদ্যালয় সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় আশপাশসহ বসতবাড়ি। বৃষ্টির পানি অপসারণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ওই সড়ক ও তার আশপাশের ডোবাগুলো পানিতে অধিকাংশ সময় তলিয়ে থাকে। আর মাঝে মধ্যে এখানকার শিশুরা খেলতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়। এছাড়া ওই সড়কটি সরু হওয়ার ফলে যানবাহন প্রবেশ না করতে পাড়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

নবগ্রামের বাসিন্দা আল্লাদী বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বছরে ছয় মাস আমার বাড়ির উঠোনে পানি থাকে। আমার বাচ্চার বয়স দেড় বছর, মাত্র হামাগুড়ি দেওয়া শিখেছে। রান্নার ফাঁকে হঠাৎ করে মাঝে মধ্যেই দেখতে পাই ফারিয়া হামাগুড়ি দিয়ে পানিতে নেমে পড়েছে। আমি দেখতে পেলে তাকে পানি থেকে তুলে আনি। কখনো পথচারীরা দেখতে পেয়ে পানি থেকে আমার বাচ্চাকে তুলে দেন। আমি আমার বাচ্চাটিকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন তারা যেন দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেন।

জান্নাতুল ফেরদৌস নামে আরেক শিশুর মা শাবনুর আক্তার শানু ঢাকা পোস্টকে বলেন, কয়েকবার পানিতে পড়ে গেছে আমার বাচ্চাটা। পৌরসভার মধ্যে থেকেও বছরে ছয় মাস পানির নিচে ঘরবাড়ি তলিয়ে থাকে। এই পানিতে ডেঙ্গু মশার জন্ম হয়। ঘরে থাকলে মশা কামড়ায়। ঘর থেকে বের হলে বাচ্চা পানিতে পড়ে। এই দুর্ভোগের শেষ কবে হবে জানি না।

মামুন খান নামে একজন বলেন, নবগ্রামের সড়কটি সরু হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না। এতে হঠাৎ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সমস্যায় পড়তে হয়। সবচেয়ে দুঃখ ও কষ্টের বিষয় হচ্ছে মাঝে মধ্যে গর্ভবতী মায়েদের হাঁটিয়ে হাসপাতালে নিতে হয়। এছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এই সড়কে বছরের অধিকাংশ সময় পানি জমে থাকে বলে এখানকার বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না।

নড়িয়া পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বাদশাহ ফকির ঢাকা পোস্টকে বলেন, জলাবদ্ধতার পানিতে শিশুরা খেলার ছলে পড়ে মারা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে। নড়িয়া পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ৮ কোটি ২০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদন হয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধান সড়ক থেকে ডাকবাংলা ও সাবেক এমপির বাড়ির সড়কের কাজ শুরু হবে। কাজটি শেষ হলে জলাবদ্ধতা ও সড়ক নিয়ে নবগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দুর্দশা শেষ হবে।

সাইফ রুদাদ/আরকে