রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫০ কেভির অত্যাধুনিক জেনারেটরটি এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ‘বিষফোড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জ্বালানি তেলের কোনো অর্থ বরাদ্ধ না থাকায় জেনারেটরটির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছেন না তারা।

খুব জরুরি সেবা ছাড়া চালানো হয় না সেটি। যে সময়টুকুও চালানো হয় তাও স্থানীয়ভাবে অর্থ জোগাড় করে চালাতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। 

এদিকে মাঝে মাঝে জেনারেটর চালু করায় রোগী ও স্বজনরা সন্দেহের চোখে দেখছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তারা ভাবছেন- সরকারি অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কর্তৃপক্ষ নিয়মিত জেনারেটর চালু করছে না। 

জানা গেছে, প্রায় আড়াই লাখ মানুষের ভরসার একমাত্র সরকারি চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ৫১ শয্যাবিশিষ্ট এই বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এই উপজেলায় ২৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চল থেকে এখানেই ছুঁটে আসে শত শত রোগী। হাসপাতালের সেবার মান নিয়ে তেমন কোনো অভিযোগ নেই তাদের। তবে বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকার বিপাকে পড়তে হয় রোগীদের। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ২০০৮ সালে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনুকূলে ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮০০ টাকা দামের ৫০ কেভির একটি অত্যাধুনিক জেনারেটর বরাদ্দ দেন সরকার। এই জেনারেটরটি চালাতে প্রতি ঘণ্টায় ডিজেল লাগে ৮ থেকে ১০ লিটার। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ১১০ টাকা। তাতে এক ঘণ্টা জেনারেটর চালাতে ব্যয় হয় প্রায় ৮০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত। এরপর মবিল ও সার্ভিসিং খরচ রয়েছে। কিন্তু জ্বালানি তেলের কোনো বরাদ্ধ নেই। জেনারেটরটির খরচ যোগান করতে না পারায় দীর্ঘ ১৪ বছর প্রায় বন্ধই ছিল। ২০২২ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব উদ্যোগে অর্থ সংগ্রহ করে জেনারেট চালু করেন। তাও সীমিত। অপারেশন ও খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এটি চালু করা হয় না।     

সরেজমিন হাসপাতালের মহিলা ও পুরুষ ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সবার হাতেই হাতপাখা। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর অনেকেই নিজেদের বিছানা ছেড়ে ওর্য়াডের বাইরে এসে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছেন। যারা বেশি অসুস্থ তারা বিছানাতেই গরমে কষ্ট পাচ্ছেন। প্রচণ্ড গরম থাকায় তাদের স্বজনরা তালের হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন তাদের। বুধবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একটানা ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অনেক রোগীই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে ৩ ঘণ্টা জেনারেটর চালু রাখেন। 

ডেঙ্গু আক্রান্ত তাজুল হোসেন খান জানান, তিনি মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে একেবারে 
ভূতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতি ও হাতপাখা তাদের একমাত্র ভরসা। বিদ্যুৎ চলে গেলে বিকল্প ব্যবস্থার রাখার জোর দাবি জানান তিনি।

রাকিব নামের এক রোগীর স্বজন জানান, তিনি তার নাতিকে নিয়ে বেশ কয়েকদিন হাসপাতালে আছেন। বিদ্যুৎ চলে গেলে তাদের আর কোনো উপায় থাকে না। প্রচণ্ড গরমে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। নাতিকে গরম থেকে বাঁচাতে তিনি নিজেই হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছেন। তিনি শুনেছেন এখানে জেনারেটর আছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটি মাঝে মাঝে চালু করেন। বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটরটি নিয়মিত চালু রাখার জন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

ফুলজান নামের ষাটোর্দ্ধ এক বৃদ্ধা বলেন, এখানকার চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক। আমার খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। তবে এ আবার কেমন হাসপাতাল-যে বিদ্যুৎ চলে গেলে আর কোনো ব্যবস্থা থাকে না?

বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোক্তাদির আরেফীন জানান, হাসপাতালে ৫০ কেভির একটি অত্যাধুনিক জেনারেটর থাকলেও এর অনুকূলে জ্বালানি তেলের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্ধ নেই। এটি চালানো খুবই ব্যয়বহুল। তাই ওটি ও জরুরি সেবা ছাড়া আমরা এটি চালু করি না। যে সময়টুকু চালু রাখা হয় সেটার ব্যয়ভার আমাদেরই বহন করতে হয়।

মীর সামসুজ্জামান/আরকে