বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, নিলাম কেন্দ্র চালু হলো, কিন্তু চাষিরা যদি ভালো দাম না পান তাহলে এটি মূল্যহীন। চাষিরা ঘাম ঝড়িয়ে চা উৎপাদন করছেন। কিন্তু বিক্রি করতে গেলে উপযুক্ত দাম পান না। আমরা আশা করছি এই নিলাম কেন্দ্রের মাধ্যমে আগের অবস্থা থেকে চা-চাষিরা মুক্তি পাবেন। চাষিরা আর কারো হাতের পুতুল হয়ে থাকবেন না। কারো ইচ্ছার ওপর যেন তাদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতে না হয়। নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণে কৃষক-শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। উৎপাদিত চা পাতার ন্যায্যমূল্য দিতে পারলেই চা নিলাম কেন্দ্রের স্বার্থকতা মিলবে।

শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ চা বোর্ড এবং স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

‘ছাওয়া না কান্দিলে মাও দুধ দেয় না’ উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকবে হবে। আমরা নিলাম কেন্দ্র চালু করলাম, এখন ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। চা বোর্ড, ফ্যাক্টরি মালিক, চা-চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের এজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চা পাতার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে হবে। কিন্তু কোনো সিন্ডিকেট করতে দেয়া হবে।

চা-চাষি ও সংশ্লিষ্টদের সঠিক প্রক্রিয়ায় চা পাতা কাটা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের তাগিদ দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন পঞ্চগড়ের চায়ের একটি অবস্থান তৈরি হয়েছে। এখানে ভালো মানের চা পাতা উৎপাদন করা গেলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগানো যাবে। পঞ্চগড়ের চা নিলাম কেন্দ্র দেশের প্রথম অনলাইন নিলাম কেন্দ্র। ভালো ফল পেতে হলে আমাদের একটু ধৈয্য ধারণ করতে হবে।  

টিপু মুনশি বলেন, চা নিলামের সময় সশরীরে যারা অংশ নেবেন তারা এখানে আসবেন। আমরা চাই বিদেশিরাও এখানে আসুক, নিলামে অংশ নিক। এজন্য যোগাযোগ ও আবাসন ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। আমরা ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালুর ব্যাপারেও ভাবছি। যদি তাদের ভালো মানের একটা পরিবেশ দেওয়া না যায় তাহলে নিলাম কেন্দ্রের সুফল পাওয়া যাবে না।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের চা উৎপাদনের ৬৫ শতাংশ উৎপাদন হয় সিলেট অঞ্চলে। সেখানে চা নিলাম কেন্দ্র করতে ১০০ বছরের বেশি সময় লেগেছে। কিন্তু এখানে মাত্র ২০ বছরের মধ্যে নিলাম কেন্দ্র করা সম্ভব হলো। এটা সত্যিই গৌরব ও সৌভাগ্যের।

এখন চায়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চা পাতা উত্তোলনের জন্য কৃষকদের বিনামূল্যে যন্ত্রপাতি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চা শিল্পের উন্নয়নে এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের সকলকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে এবং এটি অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন, পঞ্চগড় -১ আসনের সংসদ সদস্য  মজহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, পঞ্চগড়ের সাবেক জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্য দেন স্মল টি গার্ডেন ওনার্স অ্যান্ড টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ পঞ্চগড়ের সভাপতি আমিরুল হক খোকন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হান্নান শেখ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট।

এর আগে, বেলা সোয়া ১১টায় আনন্দঘন পরিবেশে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়াম চত্বরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে নিলাম কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী উদ্বোধনস্থলে স্থাপিত বিভিন্ন টি স্টল পরিদর্শন করেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসকে দোয়েল/আরএআর