টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভ্যাকসিন সংকট আর জনসচেতনতা না থাকায় প্রতিনিয়ত এই রোগে গরু মারা যাচ্ছে। এতে নিঃস্ব হচ্ছে অনেক ছোট খামারি। এদিকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকুমার চন্দ্র দাস বলছেন, মাঠ পর্যায়ে প্রাণিসম্পদের কর্মী থাকলেও এলএসডি রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা হিসেব করা হয় না। যারা হাসপাতালে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা করাতে আসেন শুধু সেগুলোর তথ্যই রাখা হয়।

দরিদ্র মোবারক হোসেনের গরু লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে এসেছিলেন। ভ্যাকসিন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যান্টিবায়োটিকসহ রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ওষুধ কেনার জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। কিন্তু তার কাছে এতো ওষুধ কেনার টাকা না থাকায় রোগাক্রান্ত গরুকে ফেরত নিয়ে যান।

মোবারক হোসেন বলেন, চরাঞ্চলের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর এই রোগ। কয়েকশো গরু আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। অনেক গরু মারা গেছে। কেউ কোনো খোঁজ নেয়নি। হাসপাতালে আসা ছাড়া কোনো সেবা দিতে প্রাণিসম্পদের কেউ বাড়িতে যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসলাম। কিন্তু গরু দেখে ওষুধ লিখে দিলেন শুধু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ১০টি গরু উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে যান খামারিরা লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের চিকিৎসা নিতে। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত এই রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় গরুর খামারিদের ফেরত যেতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৪৩ হাজার গবাদি পশু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার গরুকে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। গত দুই মাসে ৩০২টি গরুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫টি গরু মারা গেছে।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের হিসেবে এ পর্যন্ত লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে দুইশতাধিক গরু মারা গেছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু।

জানা গেছে, বর্ষার শুরুতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলে। মশা-মাছি ও খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। ফলে আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা করে মশারির ভেতরে রাখতে হয়। আক্রান্ত গরুর শরীর মাথাসহ বিভিন্নস্থানে টিউমারের মত দেখা দেয়।

লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা করতে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্তৃপক্ষের। ফলে প্রতিদিনই এই রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে গবাদিপশু। উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামেই এলএসডি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ২৫টি গরু। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক।

খামারিরা বলেন, হাসপাতাল যাওয়া ছাড়া কোনো চিকিৎসা বা পরামর্শ পাওয়া যায় না। প্রাণিসম্পদের কেউ এলাকাগুলোতে আসেন না। আমরা জানিও না এই রোগ সম্পর্কে। কি করলে কীভাবে গরুগুলোকে রোগ থেকে বাঁচানো যেতে পারে।

চন্ডিপুর গ্রামের খামারি আব্দুল লতিফ বলেন, আমার গ্রামেই ২৫টি গরু মারা গেছে। এছাড়া অসংখ্য গরু আক্রান্ত রয়েছে। কেউ খোঁজ নেয় না। চরের মানুষ নদী পার হয়ে আবার গাড়িতে করে ভূঞাপুর যেতে চায় না। অনেকের ধারণা এই রোগ হলে গরু বাঁচে না তাই খামারিরাও গরু নিয়ে হাসপাতালে যেতে চান না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকুমার চন্দ্র দাস বলেন, লাম্পি স্কিন ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার গবাদি পশুকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে রোগটি। কিন্তু ভ্যাকসিন সংকটের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া উপজেলায় তিন জায়গাতে ক্যাম্পিং করা হয়েছে। সব জায়গা করা সম্ভব হচ্ছে না ভ্যাকসিন সংকটের কারণে। ওষুধ ছাড়া খামারিরা শুধু পরামর্শ শুনতে ক্যাম্পে আসতে চায় না।

অভিজিৎ ঘোষ/এএএ