ঘড়ির কাঁটা তখন ৮টা থেকে খানিকটা দূরে। প্রতিদিনের মতো হাঁটতে বেরিয়েছিলেন মদন বাবু। মাঝপথে হঠাৎ হাঁপিয়ে উঠে থমকে দাঁড়ান। বুকের ওপর হাত চেপে ধরে লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। যেন সন্ধ্যার আকাশে কালো মেঘে ছুটে বেড়ানো একটি তারা খসে পড়ল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চিরদিনের জন্য থেমে গেল মদন বাবুর হাঁটাহাঁটি। নিথর দেহ পড়ে আছে অজ্ঞাত পরিচয়ে।

সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়ে আচমকা মদন বাবুর জীবনের হিসাব চিরতরে থেমে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই মাটিতে পড়ে থাকা অজ্ঞাত দেহের মানুষটির পরিচয় জানতে চেয়ে ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। খবরটা যেন কারো বিশ্বাসই হচ্ছিল না।

ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে ৮টা অতিক্রম করেছে। মদন বাবুর পরিচয় মিলল কিন্তু তিনি আর ফিরলেন না। হাঁটতে বেরিয়ে লাশ হয়ে ঘরে ফেরার মর্মান্তিক এ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটেছে রংপুর মহানগরীতে। কেরামতিয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন ব্রিজের কাছে পড়ে ছিলেন মদন বাবুর মরদেহ।

খবর পেয়ে ছুটে আসেন তার নিকটজনরা। ছুটে আসেন কর্মস্থলের পরিচালক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ডায়াবেটিস সমস্যার পাশাপাশি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

মৃত্যুকালে শ্রী মদন চন্দ্র দেবনাথ ওরফে মদন বাবু‌র বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। তিনি বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রর হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ী জামালপুর জেলার মেলান্দহ থানার গোবিন্দপুর নাথপাড়া।

সম্প্রতি মদন চন্দ্র দেবনাথ রংপুর নগরীর মুলাটোলে একটি বাড়িতে পরিবারসহ বাস করছিলেন। সাংসারিক জীবনে তার দুই ছেলে রয়েছে। তার বড় ছেলে রেডিও টেকনিশিয়ান হিসেবে বাংলাদেশ বেতার ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রে কর্মরত আছেন, আর ছোট ছেলে একজন শিক্ষার্থী।

শ্রী মদন চন্দ্র দেবনাথ রংপুরে যোগদানের পূর্বে রাজশাহী বেতারে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবর শুনে রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র কাজী মো. জুনজুন, রংপুর বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদসহ আরও অনেকেই ছুটে আসেন। মদন বাবু তার চাকরির বেশিরভাগ সময় রংপুরেই কাটিয়েছেন।

রংপুর বেতারের নাট্যকার ও পরিচালক মিজান তালুকদার বলেন, মদন দাদা আর নেই মানতেই পারছি না। বৃহস্পতিবার অফিস করেছেন যথারীতি। আমিও দুপুরে অফিস করেছি। আর সেই মদন দা রাতে হাঁটতে বেরিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। আমরা একদিনে সকাল সন্ধ্যার ব্যবধানে বেতারের দুজন গুণী মানুষকে হারালাম।

এদিকে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন,  রংপুর বেতারের তবলাবাদক সুবিরেশ দাশগুপ্ত বাঘার মৃত্যুখবর নিয়ে কিছু লিখতে না লিখতেই সন্ধ্যায় খবর পেলাম হিসাবরক্ষক মদন বাবু আর নেই। প্রথমে বিশ্বাসই হচ্ছিল না।‌ মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, সকলকে একদিন না একদিন চলে যেতে হবে। এটাই চিরন্তন সত্য। কিন্তু মদন বাবু বড় অসময়েই চলে গেলেন। কীইবা বয়স হয়েছিল তার!

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসকেডি