ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কয়েক দিন ধরে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার সকল নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। এতে প্রতিদিনই চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে কৃষকের শাকসবজি, বীজতলা ও রোপা আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে ভারী বন্যার আশঙ্কা নেই।

তিনি আরও জানান, সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৯৩ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৫ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার)।

জানা যায়, যমুনার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চলনবিলসহ করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, ফুলজোড় ও হুরাসাগর নদীর পানিও বেড়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ৪২টি ইউনিয়নে চরাঞ্চলের নিম্নভূমি তলিয়ে গেছে। পানি উঠতে শুরু করেছে এসব অঞ্চলের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমিতে। ইতোমধ্যে চৌহালী উপজেলার কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে। সদর উপজেলার কাওয়াকোলা, মেছড়া, কালিয়া হরিপুর, সয়দাবাদ ইউনিয়নের মানুষগুলো দুর্ভোগে রয়েছে। দফায় দফায় পানি বাড়ার ফলে এ অঞ্চলে ফসলের চাষাবাদও ব্যাহত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

এদিকে, বন্যার পানিতে গো-চারণভূমি ও বিস্তীর্ণ ঘাসের জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গো-খামারিরা। খামারিদের বাড়িতে ছোট স্থানে গাদাগাদি করে গবাদিপশু পালন করায় নানা রোগে সংক্রমিত হচ্ছে গবাদিপশু। পাশাপাশি সবুজ ঘাস না থাকায় কচুরিপানা, খড় ও দানাদার খাদ্য খাওয়াতে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে খামারিদের। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গো-খামারিরা।

চৌহালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হেকমত আলী ঢাকা পোস্টকে জানান, ইতোমধ্যে এ উপজেলার ২ হাজার ১৯০টি পরিবারের অন্তত সাড়ে ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ত্রাণ বিতরণ শুরু করা হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আজ সকালে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তবে কাজিপুর পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বাড়তে পারে। তবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এবার ভারী বন্যার আশঙ্কা নেই।

শুভ কুমার ঘোষ/এমজেইউ