রোগী দেখতে ফি নেন না গরিবের ডাক্তার
করোনার সংক্রমণ শুরুর প্রথম ধাপে গ্রামের মানুষ তাকে কাছে পেয়েছেন। দিনে-রাতে যখন ডাক পড়েছে ছুটে গেছেন তিনি। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো যখন বন্ধ ছিল, তখনো খোলা ছিল তার ব্যক্তিগত চেম্বার। মানবতার সেবায় নিয়োজিত মানুষটি রোগী দেখতে কখনো ফি নেননি। বরং মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। বলছিলাম চিকিৎসক মো. রুহুল আমিনের কথা। যাকে ‘গরিবের ডাক্তার’ বলে ডাকে গ্রামের মানুষ।
রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নে রুহুল আমিনের কর্মস্থল। কুণ্ডি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তা তিনি। ইউনিয়নের পালিচড়া বাজারে তার ব্যক্তিগত চেম্বার। সরকারি দায়িত্ব পালনের পর সন্ধ্যায় চেম্বারে রোগী দেখেন। নির্ধারিত কোনো ফি নেই রুহুল আমিনের চেম্বারে। গরিব মানুষকে বিনে পয়সায় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেন।
বিজ্ঞাপন
সদ্যপুষ্করিণীতে সাধারণ মানুষের আস্থা কুড়িয়েছেন রুহুল আমিন। করোনার সংক্রমণের শুরুতে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে রোগীদের ঠিকমতো সেবা না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তখন কোনো কোনো চিকিৎসককে হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চেম্বারে দেখা যায়নি। তখনো সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে মানুষের মাঝে ছিলেন রুহুল আমিন। দুঃসময়ে তিনি হয়ে উঠেন গ্রামের মানুষের ভরসাস্থল। এ কারণে গ্রামের মানুষও তাকে গরিবের ডাক্তার বলে ডাকেন।
দেশের করোনা পরিস্থিতি ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সোমবার (০৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশ লকডাউনে থাকবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। হঠাৎ লকডাউন ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে সাধারণ মানুষ। তড়িঘড়ি করে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ফিরে আসছেন গ্রামে। লকডাউন পরিস্থিতিতে এসব মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে আগের মতো নিজেকে উজাড় করে দিতে চান চিকিৎসক রুহুল আমিন।
অন্য চিকিৎসকের মতো শুধু সরকারি দায়িত্ব পালন করে চুপচাপ বসে থাকতে চান না রুহুল আমিন। মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি এবং বহির্বিভাগ, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাতে চান রুহুল আমিন।
নতুন করে করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়া, লকডাউন ঘোষণা এবং সাধারণ মানুষের শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হওয়ার প্রেক্ষাপটে আগের মতোই সেবা দিতে প্রস্তুত তিনি। এ কারণে তার চেম্বারে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। তবে নিজের ও রোগীর সুরক্ষার জন্য তেমন কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই রুহুল আমিনের। এজন্য নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে তিনি নিয়মিত রোগী দেখেন।
ঢাকা পোস্টকে চিকিৎসক রুহুল আমিন বলেন, গ্রামীণ জনপদে মানুষের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সরকার আমাদের নিয়োগ দিয়েছেন। আমাদের কাজই হলো স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির সময় যথাযথ সুরক্ষা সামগ্রী না থাকায় আমার মতো অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। মহামারিতে মানুষের পাশে থাকার জন্য আমি প্রস্তুত। মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, রোগীর চাপ বেড়েছে। চিকিৎসাসেবা পেতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন। বেশির ভাগ রোগী পরিচিত। তারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন। কাউকে ফেরাতে পারি না। করোনার ঝুঁকি আছে, জেনেও সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থেকে চিকিৎসা দিচ্ছি।
প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ রুখতে হলে অবশ্যই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি যাই হোক, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। কারো মধ্যে করোনায় আক্রান্তের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এটা লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। উপসর্গ বুঝে আলাদা ঘরে থাকতে হবে। খাবার থালা-বাটি আলাদা করে ফেলতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাসহ ওষুধ সেবন করতে হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম