টাকা দিলেই সেবা মেলে
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার নির্বাচন অফিস। এই অফিসে সেবা নিতে এসে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয় সেবাগ্রহীতাদের। নতুন ভোটার হওয়া, সংশোধন কিংবা স্থানান্তর যে কাজই হোক না কেন টাকা না দিলে কোনো কাজ হয় না এখানে। এমনকি টাকা ছাড়া সেবা নিতে গেলে সাধারণ মানুষ লাঞ্ছিত হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। তবে টাকা দিলে দ্রুতই যে কোনো কাজ তারা করে দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন অফিসে কর্মরত কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতিনিয়তই লেনদেন চালায় দালাল চক্রের সদস্যরা। তাদের সঙ্গে লেনদেন না করে গেলে সবকিছু সঠিক থাকার পরও দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হয় সাধারণ মানুষকে। সম্প্রতি তাদের এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। অদৃশ্য ক্ষমতার বলে এখনো নীরব পন্থায় চলছে তাদের এসব কার্যক্রম। এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্রের গুরুত্বপূর্ণ সব কাজের সমাধান করতে দেরি হওয়ায় অনেকেই পাসপোর্ট ও চাকরিসহ বিভিন্ন জরুরি কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়ছেন।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন অফিসের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. ইসমাঈল হোসেন অনিয়মের কাজটিতে বেশ পারদর্শী। তার কাছে কোনো ভুক্তভোগী কাজ নিয়ে গেলে সেটি তিনি প্রথমে পরিষদের বাইরে থাকা বেশকিছু কম্পিউটারের দোকানে ট্রান্সফার করে দেন। তাদের মাধ্যমে লেনদেন শেষে কাজ আসে নির্বাচন অফিসে। তখন খুব দ্রুতই কাজটি সমাধান হয়ে যায়। তার বিনিময়ে ভুক্তভোগীকে গুনতে হয় হাজার হাজার টাকা। এতেই শেষ নয় এমন মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার পরও সরকারি এ কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবা প্রার্থীদের পেতে হয় চরম দুর্ব্যবহার।
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করতে আসা অহিদ মিয়া নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, ভোটার আইডি কার্ডের ভুল সংশোধন ও নতুন ভোটার হওয়া নিয়ে এখানে চরম পর্যায়ে দুর্নীতি চলছে। কর্মকর্তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পর হয়রানি হতে হচ্ছে। এ জটিলতার সুযোগকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল এক দালালচক্রের। যারা টাকা দিচ্ছে, তাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে। যারা টাকা দিচ্ছে না, তাদের সমস্যার কোনো সমাধান নেই।
যোশর ইউনিয়ন থেকে আসা ইদ্রিস আলী বলেন, আমার আইডি কার্ড করার জন্য নির্বাচন অফিসের ইসমাইল হোসেন ১৫০০ টাকা চেয়েছে। আমি টাকা দিতে পারিনি বলে আমার এনআইডির কাজ স্থগিত রয়েছে।
জুয়েল মিয়া নামে একজন জানান, আমার ভাইয়ের নতুন আইডি কার্ডের জন্য ২৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা ছাড়া তাদের কাছে কোনো সহায়তা পাওয়া যায় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, অফিস স্টাফদের কী বলবো, তারা কি কর্মকর্তাকে না জানিয়ে কিছু করে? সকলে মিলেই জনগণকে এক প্রকার জিম্মি করেই দিনের পর দিন এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিবপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার উপর আনা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলা আপনারা একটু যাচাই করে দেখেন। এগুলা আমাদের অফিসের অন্য সকল স্টাফ এ কাজগুলো করে। আমি এসব করি না।
এ ব্যাপারে শিবপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ফারিজা নূরের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি অফিসে জয়েন্ট করেছি। এখন পর্যন্ত এসব কিছু আমি শুনিনি, তারপরও আপনি যখন বলেছেন বিষয়টির দিকে আমি নজর রাখবো।
তন্ময় সাহা/এএএ