ধসে পড়া সড়কেই ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল
ফরিদপুর শহরের গুহলক্ষীপুর চুনাঘাটা থেকে পল্লি কবি জসীমউদ্দিনের বাড়ি হয়ে অম্বিকাপুর সেতু পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কটি গত চার বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পথচারী ও যানবাহন।
এ অবস্থায় সড়কটি সংস্কারের দাবিতে এলাকার লোকজন কয়েক দফা মানববন্ধন করেছে। তবে বারবার রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন করলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এ সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। চার বছর আগে কুমার নদ খননের সময় অন্তত দুটি জায়গায় সড়কের একশ থেকে দেড়শ মিটার অংশের অর্ধেকের বেশি অংশ নদে ধসে পড়েছে। রিকশা কিংবা ইজিবাইক নিয়ে যাতায়াত করার মতো অবস্থা নেই। এলাকাবাসীর জরুরি প্রয়োজনে দমকল বাহিনীর গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স আসার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওই এলাকার আড়াই সহস্রাধিক পরিবার। গত প্রায় চার বছর ধরে সড়কটির এ বেহাল দশা হলেও এটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী।
শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদের দক্ষিণ পাড়ে এ সড়কটি অবস্থিত। ১৯৭৪ সালে ব্যাপক বন্যা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড শহর রক্ষা বাধ নির্মাণ করে। পরবর্তীতে ফরিদপুর পৌরসভার উদ্যোগে এ সড়কে পিচ ঢালাই করা হয়। তবে গত চার বছর আগে কুমার নদ খনন প্রকল্প শুরু হলে ওই সড়কের দুই জায়গায় মারাত্মক ধস নামে। এরপর ওই সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের চুনাঘাট থেকে কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ির দিকে যাওয়ার পথে কুটির দোকান ও মো. খালেক মিয়ার বাড়ির সামনে বিশাল ধ্বসের সৃষ্টি হয়ে রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য গর্তের। এ সড়ক পার হয়ে ওই এলাকায় বসবাসকারী চাকুরিজীবীরা কর্মক্ষেত্রে আসে, ব্যবসায়ীরা আসেন তাদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। ওই সড়ক পাড় হয়েই শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করতে আসা যাওয়া করেন।
গুহলক্ষ্ণীপুর মহল্লার বাসিন্দা সরকারি ইয়াছিন কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার (১৮) বলেন, এই রাস্তার অনেক জায়গায় ভাঙাচোরা। কিছু কিছু জায়গায় রাস্তার পিচ উঠে গেছে অনেক জায়গায় রাস্তার মাটিই অর্ধেক সরে গেছে। মাঝে মাঝে দায়সারাভাবে মাটিভর্তি বস্তা দিয়ে সংস্কার করা হলেও দশদিনের মধ্যেই আগের মত অবস্থা হয়ে যায়।
শহরের আলীপুর মহল্লার বাসিন্দা ও ওই পথ দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে চলাচলকারী একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির বিপণন কর্মকর্তা মো. আহাদুল শেখ (৩২) বলেন, কাজের সুবাদে আমাকে প্রতিদিনই এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই এই সড়কের এই অবস্থা দেখছি। বৃষ্টির দিনে পানি জমে পানি-কাঁদায় সড়কের যা তা অবস্থা হয়ে যায়।
গুহলক্ষ্ণীপুর মহল্লার বাসিন্দা সাজিদ মোল্লা (৩২) বলেন, শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মধ্যে এ সড়কটি অন্যতম। কিন্তু এটি সংস্কার করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এমনও হয় যে একটা অটোরিকশা গেলে সেটিকে সাইড দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলকে এক সাইড নিয়ে দাঁড়াতে হয়। সড়কের এই বেহাল দশায় আমরা এলাকাবাসীসহ চলাচলকারী সবাই আমরা দুর্ভোগে আছি। এ সড়কটি বর্তমানে ফরিদপুর পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল জলিল। তিনি বলেন, সড়কের দুটি অংশ কুমার নদ খননের কারণে ধসে যায়। পৌরসভা বালুর বস্তা ফেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে।
ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস জানান, সড়কটির বেহাল অবস্থা। এলাকাবাসীর দুর্ভোগের বিষয়টি তার জানা আছে। তিনি নিজেও সরেজমিনে ওই সড়কটি দেখেছেন, স্বচক্ষে দেখেছেন মানুষের দুর্ভোগ। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফরিদপুর পৌরসভা একটি ফান্ড পেয়েছে। এ ফান্ডে ওই সড়কটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি দরপত্র আহ্বান করে দ্রুত সড়কটির সংস্কার কাজে হাত দিতে পারবো।
জহির হোসেন/এএএ