জান্নাত আরা ঝর্নার বাবার বাড়ি এটি, পাশের ছবিতে মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে ঝর্না

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা নারীর পরিচয় মিলেছে।

ওই নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্না (৩০)। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মো. ওলিয়ার রহমান ওরফে ওলি মিয়ার মেজো মেয়ে তিনি। ওলিয়ার রহমান গোপালপুর ইউনিয়নের কামারগ্রাম ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।

মাওলানা মামুনুল হক ওই নারীকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে নাম আমিনা তৈয়বা বললেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার নাম জান্নাত আরা ঝর্না। ঝর্নার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন ঢাকা পোস্টের ফরিদপুর প্রতিনিধি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রচারের পর দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ঝর্না এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। ঝর্নার আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছে; দুটি সন্তান আছে। এ কথা সবাই জানলেও দ্বিতীয় বিয়ের খবর জানেন না এলাকাবাসী।

রোববার (০৪ এপ্রিল) সকালে ঝর্নার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বাবা ওলিয়ার রহমান ও মা শিরীনা বেগমের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি।

ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘জান্নাত আরা ঝর্নার নয় বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল হাফেজ শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারীর চর-কচুড়িয়া গ্রামে। শহীদুল্লাহ ও ঝর্না দম্পতির আব্দুর রহমান (১৭) ও তামীম (১২) নামে দুই পুত্রসন্তান রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে আড়াই বছর আগে শহীদুল্লাহ ও ঝর্নার ডিভোর্স হয়ে যায়। দুই বছর আগে পরিবার থেকে পাত্র দেখে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পরে নিজেই বিয়ে করেছে বলে জানায় ঝর্না। তবে কাকে বিয়ে করেছে তা আমাদের জানায়নি।’

শহীদুল্লাহর সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ আছে কি না জানতে চাইলে ওলিয়ার রহমান বলেন, ‘মেয়ের সঙ্গে ডিভোর্সের পর শহীদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ রাখিনি। মেয়েও যোগাযোগ রাখেনি।’

এ বিষয়ে জানতে শহীদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি। একাধিকবার তার মোবাইল নম্বরে কল দিলেও তিনি ধরেননি। 

গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোনায়েম খান বলেন, ‘ঝর্নার বাবা ওলিয়ার রহমান সহজ-সরল মানুষ। কামারগ্রাম চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি। তার মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছে। সেই ঘরে দুই ছেলে আছে। পরে বিয়ে হয়েছে কি না তা আমাদের জানা নেই। গ্রামের কেউ দ্বিতীয় বিয়ের কথা জানেন না।’

শনিবার সোনারগাঁর রয়েল রিসোর্টে মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করে একের পর এক প্রশ্ন করার বিষয়টি ফেসবুকে লাইভ হয়। এ সময় তিনি বারবার বলতে থাকেন, ‘ওই নারী আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। শরিয়ত মেনে তাকে বিয়ে করেছি। এর প্রমাণ আছে। আমি কি আমার স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বিশ্রামের জন্য আসতে পারি না?’

এরই মধ্যে ফেসবুকে প্রকাশ হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই নারী জানান তার নাম জান্নাত আরা ঝর্না। গ্রামের বাড়ি আলফাডাঙ্গায়। তিনি মামুনুলের দ্বিতীয় স্ত্রী।

কামারগ্রামে ঝর্নার বাবা ওলিয়ার রহমানের নির্মাণাধীন বাড়ি

সোনারগাঁর রয়েল রিসোর্টের ৫০১ নম্বর কক্ষে নারীসহ মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করেন স্থানীয়রা। 

মামুনুল হক অবরুদ্ধ এমন খবর শুনে সেখানে সন্ধ্যার পর জড়ো হতে থাকেন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে রয়েল রিসোর্টে হামলা চালান তারা। এতে রিসোর্টের মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম, এসিল্যান্ড গোলাম মোস্তফা মুন্না, নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টিএম মোশাররফ হোসেন, সোনারগাঁ থানার ওসি (তদন্ত) তবিদুর রহমানসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা। একপর্যায়ে মাওলানা মামুনুল হককে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান বিক্ষুব্ধ হেফাজতের কর্মীরা। 

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোশাররফ হোসেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামুনুল হককে থানায় নেওয়ার পথে রিসোর্টে হামলা চালান হেফাজতের কর্মীরা। পরে মামুনুল হককে নিরাপদে স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে হামলা চালিয়ে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান হেফাজতের কর্মীরা। 

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মামুনুল হক বলেছেন, অবকাশকালীন সময় কাটাতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন। ওই নারীকে দুই বছর আগে বিয়ে করেছেন তিনি। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তাকে তর্কবিতর্ক করতে দেখা যায়।

এদিকে মামুনুল হকের ওপর হামলার অভিযোগে থানায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতার নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। রোববার (০৪ এপ্রিল) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় এ অভিযোগ দেওয়া হয়। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের ১০ নম্বর অঞ্চলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুফতি ফয়সাল মাহমুদ বাদী হয়ে এই অভিযোগ দেন।

এএম/জেএস