দলের বারোটা বাজাবেন না : এমপিকে আওয়ামী লীগ নেতা
খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান বাবু। হঠাৎ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মহসীন রেজা এমপিকে হাতের ইশারায় থামিয়ে উচ্চস্বরে বলেন, ‘অনেক হয়েছে, আপনি এভাবে আর দলের বারোটা বাজাবেন না।’ তার কথার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত নেতাকর্মীরাও এমপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। তাৎক্ষণিক এমপি মাইক রেখে বসে পড়েন।
গত বুধবার ( ২৩ আগস্ট) উপজেলার কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে দেখা যায়, খুলনা-৬ আসনের এমপি মো. আক্তারুজ্জামান বাবু বলছেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে গণমানুষের দল। এখানে কর্মীদের উচ্ছ্বাস থাকবে। কর্মীরা স্লোগান দিয়ে এগিয়ে আসবে। স্লোগান হচ্ছে এই দলের প্রাণ।
ওই সময় কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মহসীন রেজা দাঁড়িয়ে এমপিকে থামিয়ে বলেন, এখানে উসকানি দেবেন না। উসকানিমূলক বক্তৃতা দিলে হবে না। আপনি আর দলের বারোটা বাজাবেন না। অনেক করেছেন। আমরা কিন্তু এতদিন কোনো কথা বলিনি।
সভায় উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সভা মঞ্চ থেকে বক্তব্যর জন্য এমপির নাম ঘোষণা করলে তার অনুসারীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্লোগান বন্ধের আহ্বান জানান। কিন্তু তার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে স্লোগান অব্যাহত রাখেন এমপি অনুসারীরা। পরবর্তীতে এমপি বাবু তার বক্তৃতাকালে স্লোগানধারী তার অনুসারীদের পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রতিবাদ জানালে তাৎক্ষণিক স্থানীয় এমপি বক্তৃতা শেষ করেন।
এ বিষয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম মোহসিন রেজা বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে পাওয়া না পাওয়ার ক্ষোভ রয়েছে। সে কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের মনের শক্তি ফিরে পেতে সাতটি ইউনিয়নে শোকসভার আয়োজন করেছি। প্রোগ্রামগুলো দেখে জনগণও বুঝবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এক। এখানে কেউ কারোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া যাবে না। উনি (এমপি) প্রোগ্রামে বারবার ১০-১২ জন ছেলে নিয়ে যান। উনি (এমপি) যখন বক্তব্য দেন তখন ওই ছেলেগুলো শুধু স্লোগান দেয়। জেলার সিনিয়র নেতাকর্মীদের বক্তব্যের সময় ওই ছেলেরা স্লোগান দেয় না। তাহলে দলের সিনিয়র নেতাকর্মীদের অপমান করা হয়। এই ব্যাপারটা এমপি সাহেব বুঝতে চান না। বুধবারের প্রোগ্রামের সময় স্বল্পতার কারণে আমিও ৩ মিনিটের বেশি বক্তব্য দিতে পারিনি। বক্তৃতার জন্য এমপির নাম ঘোষণার সময় তার অনুসারী ১০-১২ জন ছেলে স্লোগান শুরু করলে আমি নিষেধ করি। কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে স্লোগান দিতে থাকে। পরে এমপির বক্তৃতাকালে তিনি উসকানিমূলুক বক্তৃতা দেওয়া শুরু করেন। এ সময় আমি প্রতিবাদ করি।
তিনি আরও বলেন, এমপি হচ্ছে দলের ফসল। নেত্রী বরাদ্দ দিলে পূর্বে আমরা দেখেছি দলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে আলোচনা করে নেন। কিন্তু উনি (এমপি) ঘরে বসে বসে তার অনুসারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করেন। কোথায় উন্নয়ন করেছেন আমরা জানি না। উনি এমপি হয়েছেন দলের কারণে, ব্যক্তিগত কারণে না। টিআর, কাবিখা, কাবিটা, পানির ট্যাংক ও টিউবওয়েল কোথায় দিচ্ছে তাও আমরা জানি না। এসব বিক্রি করে কেউ শত কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবে আর দলের নেতাকর্মীদের ভিক্ষা করে খেতে হবে।
সভামঞ্চে উপস্থিত থাকা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার প্রেম কুমার মন্ডল বলেন, এটা নিজেদের মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি। পরবর্তীতে প্রোগ্রাম শেষে সকলে এক সাথে চা খেয়েছি। বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।
শোক সভায় উপস্থিত থাকা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব আলী সানা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আগামী সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ করতে কয়রায় উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সাতটি ইউনিয়নে শোক সভা আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচটি ইউনিয়নে শোক সভা সম্পূর্ণ হয়েছে। প্রতিটি প্রোগ্রামে স্থানীয় সংসদ সদস্য তার কিছু অনুসারী নিয়ে আসেন। তারা শুধু এমপি সাহেবের বক্তব্যের সময় স্লোগান দেয়। জেলার আর কোনো নেতার সময় তারা থাকে না। এটা দলের জন্য খুবই বিব্রতকর।
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
মোহাম্মদ মিলন/আরএআর