রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে জনবল সংকটে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। ৫০০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী মিলে ৩৩৯ জনবল সংকট রয়েছে রমেক হাসপাতালে। এতে করে উত্তরের দুই কোটি মানুষের ভরসাস্থল এ হাসপাতালে কাঙ্ক্ষিত সেবার পরিবর্তে বাড়ছে ভোগান্তি। শূন্য পদে জনবল পূরণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ২৫০ শয্যা নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৬ সালে হাসপাতালটিকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯৩ সালে আরও ১০০ শয্যা বর্ধিত করে ৬০০ শয্যায় রূপান্তরিত করা হয়।

সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাসেবার মানোন্নয়নে হাসপাতালে আধুনিক সিসিইউ, আইসিইউ, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটসহ বিভিন্ন বিভাগ চালু করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রশাসনিকভাবে অনুমোদনপ্রাপ্ত এক হাজার শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ রোগী এবং জরুরি বিভাগে প্রায় ৫০০ রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে থাকেন।

শয্যা ও রোগীর চাপ বাড়লেও সেবা কার্যক্রম চলছে ৫০০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়েই। চিকিৎসক-নার্স সংকটের কারণে রোগীরা সময় মতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। অপরদিকে কর্মচারী সংকটের কারণে হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়ে নাখোশ রোগী ও স্বজনরা।

কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হাসপাতালের প্রথম শ্রেণির চিকিৎসকসহ অন্যান্য ৩২২টি পদ থাকলেও কর্মকরত আছেন ২২৭ জন, দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সসহ অন্যান্য পদ ৯৯৩টি থাকলেও রয়েছে ৯৭০ জন, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী পদ ১০৫টি থাকলেও রয়েছে ৬৬ জন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ ৪৪৫টি থাকলেও রয়েছে ২৬৩ জন। তবে হাসপাতালে তৃতীয় শ্রেণির সহকারী নার্সের ১০টি পদের বিপরীতে ১০ জনই রয়েছে।

রমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. জামাল উদ্দিন মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগীদের বাড়তি চাপের সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আইসিইউ, সিসিইউ, বার্ন ইউনিটসহ বিশেষায়িত বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে এসব বিভাগে চিকিৎসক, নার্সসহ স্টাফদের সংকট রয়েছে। শূন্য পদগুলোতে জনবল দ্রুত নিয়োগ হলে রোগীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে বলে আশা করছি।

রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫০০ শয্যা থেকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল সেই আগের শয্যারই রয়ে গেছে। এর উপর হাসপাতালে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। একে তো জনবল অনেক কম এর উপর রোগী দ্বিগুণেরও বেশি। তাই চিকিৎসক-নার্স, স্টাফরা নির্ধারিত কাজের চেয়ে বেশি কাজ করলেও রোগী ও স্বজনদের সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, রোগী ও স্বজনরা প্রায়ই হাসপাতালের টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ নানা বিষয় নিয়ে অভিযোগ করে আসছেন। জনবল কাঠামো ও রোগী অনুযায়ী শয্যা বর্ধিত করা হলে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সেবায় নিয়োজিতরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারবে। এতে করে রোগীরাও তাদের কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইউনুস আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ। এখানে প্রতিদিনই রোগীদের ভিড় লেগে থাকে। এ হাসপাতালকে এক হাজার শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল কাঠামো ৫০০ শয্যারই রয়ে গেছে। জনবল বাড়ানোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালে ১৮২টি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ খালি রয়েছে। এসব শূন্য পদের জন্য মাস্টাররোলে জনবল পদায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এমজেইউ