ট্রাফিক পুলিশের জরিমানায় জ্ঞান হারালেন মোটরসাইকেল চালক
ট্রাফিক পুলিশের মামলায় জরিমানার টাকার অঙ্ক দেখে জ্ঞান হারিয়েছেন নেছার উদ্দিন নামে এক মোটরসাইকেল চালক। সোমবার (২১ আগস্ট) বিকেলে শরীয়তপুরের মনোহর বাজার মোড়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
নেছার উদ্দিন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের আব্দুল লতিফ জমাদারের ছেলে। মোটরসাইকেলে ভাড়ায় যাত্রী বহন করেন।
বিজ্ঞাপন
ট্রাফিক পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশ নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বিকেলে মনোহর বাজার মোড়ে চেকপোস্ট বসায়। এ সময় নেছার উদ্দিন দুইজন যাত্রী নিয়ে শরীয়তপুর থেকে নাগেরপাড়ার দিকে রওনা করলে চেকপোস্টে তার লাইসেন্সসহ কাগজপত্র পর্যবেক্ষণ করে ট্রাফিক পুলিশ। ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ কয়েক মাস আগে শেষ হওয়ায় পুলিশ তাকে ডিজিটাল ডিভাইসে মামলা দিয়ে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে। জরিমানার টাকার অঙ্ক দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন নেছার উদ্দিন। এরপর তাকে পুলিশ ও স্থানীয়রা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
নেছার উদ্দিনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তার পরিবারে বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সদস্য সংখ্যা ৭ জন। পরিবারে উপার্জন করেন শুধুমাত্র নেছার উদ্দিন। তার বাবা এক সময় ফুটপাতে পান-বিড়ি বিক্রি করতেন। এখন অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতেই থাকেন। নেছার উদ্দিন যাত্রীসেবা দিতে পুরোনো একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। এর মধ্যে ৮০ হাজার টাকা কিস্তি উঠিয়ে পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা প্রতি মাসে ৮ হাজার করে কিস্তিতে পরিশোধ করছেন।
নজরুল ইসলাম মিনার নামে একজন প্রতক্ষদর্শী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চেকপোস্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নেছার উদ্দিনকে থামায় ট্রাফিক পুলিশ। তার গাড়িতে হেলমেট বিহীন তিনজন লোক ছিল। এ সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে মামলা দিলে তিনি জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। এরপর তাকে পুলিশ ও স্থানীয়রা তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেন। জ্ঞান না ফিরলে তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
নেছার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃদ্ধ মা-বাবা ও পরিবার নিয়ে কষ্ট করে দিন যাপন করি। উপার্জন করি মোটরসাইকেল চালিয়ে। আমাকে আটকানোর পর পুলিশকে বলেছিলাম যে, ভাড়ায় গাড়ি চালাই, গরিব মানুষ আমি। কিন্তু আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ কয়েক মাস আগে উত্তীর্ণ হওয়ায় আমাকে ৫ হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়। এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার। এতগুলো টাকা কোথা থেকে দেব তা ভেবেই আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। আমার জরিমানার টাকা আমি মাফ চাই। যদি জরিমানার টাকা মওকুফ করা না হয়, তাহলে কোনো কিছু বিক্রি করে যে টাকা দেব সেই সক্ষমতাও আমার নেই।
শরীয়তপুর সদর ট্রাফিক বিভাগের টিএসআই ফজলুল করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হেলমেট বিহীন তিনজনকে নিয়ে গাড়ি চালানোয় তার গতিরোধ করি। পরে তার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকায় অনালাইন ডিভাইসে মামলা দেওয়া হলে জরিমানার অঙ্ক আসে ৫ হাজার টাকা। টাকার পরিমাণ দেখে সে অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর তার মাথায় পানি দেওয়া হয়। তার সহযোগীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শরীফ উর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শারীরিক দুর্বলতার কারণে নেছার উদ্দিন জ্ঞান হারিয়ে থাকতে পারেন। তিনি চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/আরএআর