বরিশালে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে ডাবের দাম। আকার ভেদে প্রতিপিস ডাব এখন ১৬০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিনে ডাবের দামে এমন চিত্রই দেখা গেল বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায়।

বরিশাল সদর উপজেলার চাঁদপুরা ইউনিয়নের তালুকদার বাড়ির খলিলুর রহমান জানান, পাঁচদিন আগেও তার গাছের ডাব প্রতিপিস ৩০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছেন। কাছাকাছি অভিজ্ঞতা চরকাউয়া ইউনিয়নের কর্নকাঠি গ্রামের মুসা খানের। গাছ থেকে পাইকারি প্রতিপিস ৩০/৪০ টাকা দামে বিক্রি করা হলেও ভোক্তা পর্যায়ে ডাবের দাম হঠাৎ ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

ক্রেতারা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপকে পুঁজি করে ডাব সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে নগরী ও আশপাশের এলাকায়। বিশেষ করে হাসপাতাল ও ক্লিনিক সংশ্লিষ্ট এলাকায় এই দামে আরও বেপরোয়া।

নগরী ঘুরে ডাব বিক্রেতাদের এমন স্বেচ্ছাচারিতার প্রমাণও পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ভ্যানে ডাব বিক্রি করেন ইউনুস আলী। তিনি দাবি করেন, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে ডাব বেশি পাওয়া যায় না। তার উপরে ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ায় ডাবের চাহিদা বেশি। গৃহস্থ পর্যায়ে প্রতিপিস কিনে পরিবহণ খরচ দিয়ে শহরে আনতেই ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পড়ে। এজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিপিস ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু উদ্যান এলাকার বিক্রেতা রাসেল বলেন, ডাব ২৫০ টাকা বিক্রি করলে লাভ রাখা যায়। এখন ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি করি। এতে তেমন লাভ হয় না। 

নথুল্লাবাদ এলাকার জসিম বলেন, গ্রামে এখন ডাব পাওয়া যায় না। এজন্য ডাব বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় ডাব বিক্রি করতে খারাপ লাগলেও আমাদের করার কিছু নেই। টিকে থাকার জন্য বিক্রি করতে হচ্ছে।

সদর রোডের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন সেলিম মিয়া বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় ১৯০ টাকায় এক পিস ডাব কিনেছি। যা পনেরো দিন আগেও ৬০ টাকায় কিনতাম। বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর ডাবের ফলন হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এত অস্বাভাবিক দাম রাখছে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন রাজ্জাক বলেন, করোনার মতো মহামারির সময়েও মানুষ এত সিন্ডিকেট করেনি। তখন আমার আব্বাকে নিয়ে এখানে এসেছিলাম। তখনো ডাব ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কিনেছি। আজ সকালে (রোববার) আমার মায়ের জন্য একটি ডাব কিনতে হয়েছে ২০০ টাকায়।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ফয়জুল বাশার বলেন, ফ্লু জাতীয় যেকোনো রোগে উপাদেয় ডাব। বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বরে ডাব স্যালাইনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসকরাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সেই সুযোগ হয়ত কাজে লাগাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারির আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল জেলার সহকারী পরিচালক সাফিয়া সুলতানা বলেন, ডাবের দাম অস্বাভাবিকভাবে আদায় করা হচ্ছে এমন খবরে ইতোমধ্যে আমরা নজরদারি শুরু করেছি। যেহেতু ডাবের কোনো নির্ধারিত বাজার নেই। এজন্য বিভিন্ন স্পটের ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কেউই ক্রয় রসিদ দেখাতে পারেনি। প্রথম দিন বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এরপর না শুনলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিক্রেতাদের যতই যুক্তি থাকুক একটি ডাবের দাম ১৮০ থেকে ২২০ টাকা হওয়াটা অস্বাভাবিক। কারণ ডাবগুলো বরিশালের আশপাশের গ্রাম থেকেই কিনে আনেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এএএ