শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি অদম্য সজীবের জীবনে
আকাশছোয়া স্বপ্ন আর অদম্য ইচ্ছা শক্তির কাছে হার মেনেছে প্রতিবন্ধকতা। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা উচ্চ শিক্ষা অর্জনে অদম্য সজিবকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও তিনি বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম ফুলমতি কলাবাগান গ্রামের মৃত জিন্নাত আলীর ছেলে সজিব মিয়া (২৮)। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সজিব অষ্টম। জন্মগতভাবে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। উচ্চতা প্রায় তিন ফিট। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় হাঁটাচলা করতেও নানা সমস্যায় পড়তে হয় তাকে।
বিজ্ঞাপন
পরিবারের সদস্যদের উৎসাহে তিনি ইতোমধ্যেই মাস্টার্স পাস করেছেন। অভাব অনটন ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। এছাড়াও পড়ালেখার খরচ জোগান দিতে তাকে টিউশনি ও কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সজিব মিয়া (২৮) উপজেলার পূর্ব ফুলমতি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালে বানিজ্য বিভাগ থেকে এসএসসি, নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০১৩ সালে মানবিক বিভাগ থেকে এইচএসসি, লালমনিরহাট সরকারি কলেজ থেকে ২০১৯ সালে দর্শন বিভাগ থেকে অনার্স ও একই কলেজ থেকে ২০২৩ সালে মাস্টার্স শেষ করেছেন। দিয়েছেন ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষা। হতে চান ম্যাজিস্ট্রেট।
অভাব অনটনের সংসার হওয়ার কারণে বসে না থেকে দুটি ব্যাচ টিউশনি করিয়ে কোনোরকমে সংসার চালান সজীব মিয়া।
দেখতে ছোট হলেও প্রখর মেধা শক্তি দিয়ে বাম হাতে লিখে সহজেই ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দেন যে কোনো বিষয়। আর ছাত্র-ছাত্রীরা সজীব মিয়ার কাছে টিউশনি করে সহজে বুঝতে পারেন। অদম্য ইচ্ছা শক্তি সজীব মিয়ার মেধাবী কার্যক্রম দেখে রীতিমতো অবাক অনেকেই।
স্থানীয়রা জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও ছোট বেলা থেকেই সজীব মিয়ার পড়াশোনার প্রতি প্রবল ইচ্ছা তাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। কোনো বাধাই সজীব মিয়ার পড়াশোনা বন্ধ করতে পারেনি। শত অভাব অনটনের মাঝেও পড়াশোনা করে আজ মাস্টার্স পাশ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছেন।
সজিব মিয়া বলেন, মানুষের সকল বাধা বিপত্তিকে পিছনে ফেলে আমি আমার ইচ্ছা শক্তি দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। আমার ইচ্ছে আমি বিসিএসএ পাস করে ম্যাজিস্ট্রেট হতে চাই। আর আমাকে দেখে যেন প্রতিবন্ধীরা সকল প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আমি এসএসসি থেকে অনার্স পরীক্ষা পর্যন্ত অসুস্থতা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। আমি আগামীতে বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছি। আমার প্রতিবন্ধী ভাতা আছে, তিন মাস পরপর ২ হাজার ৫০০ টাকা পাই। এ অবস্থায় আমার যদি একটা চাকরির ব্যবস্থা হতো তাহলে আমার জন্য অনেক উপকার হতো। চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পারতাম। কেউ যদি আমার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করতো।
সজিব মিয়ার কাছে টিউশনি করা আরিফ ও সফিকুল আলম বলেন, অন্যান্য স্যারের চেয়ে সজিব স্যার অনেক ভালো বোঝান, যেকোনো বিষয়ে সজিব স্যার আমাদের সহজে বুঝিয়ে দেন, তাই আমরা সজীব স্যারের কাছে আনন্দ নিয়েই পড়ি। আমাদের পড়াশোনা অনেক ভালো হচ্ছে।
উপজেলার নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ জানান, সজীব আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিল। তিনি প্রখর মেধাবী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তার লেখাপড়ার প্রতি প্রচুর আগ্রহ ছিল। তিনি ম্যাজিস্ট্রেট হতে চান। দোয়া করি তার মনের আশা যেন আল্লাহ পূরণ করেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে সব কিছু জয় করা যায় তারই প্রমাণ দিয়েছেন সজীব। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও শত প্রতিকূলতাকে জয় করে মাস্টার্স পাশ করেন। এখন বিসিএস দিচ্ছে। তার ইচ্ছে বিসিএস পাশ করে একজন ম্যাজিস্ট্রেট হবে। আমি তার সফলতা কামনা করি যাতে তার মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।
মো. জুয়েল রানা/এএএ