‘সারেগামাপা’ খ্যাত গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল, বিতর্কের সঙ্গেই যেন তার বসবাস। সম্প্রতি নড়াইলের রাস্তায় মদ্যপ অবস্থায় মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান তিনি। এ ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পান গায়ক নোবেল।

বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) রাত সাড়ে ৭টার দিকে কালিয়া উপজেলার বড়দিয়া বিদ্যুৎ অফিস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এসময় স্থানীয়রা নোবেলকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে গেলে তার মাতালামি দেখে ভিডিও ধারণ করেন। ঘটনার পরদিন শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের মাতলামির কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। নোবেলের এমন কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে নিন্দার ঝড়।

ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের হাতে আসা এক মিনিট চার সেকেন্ড ও ১৬ সেকেন্ডের দুইটি ভিডিওতে দেখা যায়, নোবেল মদ্যপ অবস্থায় অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছেন এবং স্থানীয়দের তাচ্ছিল্য করে বিভিন্ন মন্তব্য করছেন। পরে স্থানীয়রা নোবেলকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক করে তার বন্ধুদের সঙ্গে গোপালগঞ্জের উদ্দেশে পাঠিয়ে দেন। 

জানা গেছে, অগ্রিম টাকা নিয়ে অনুষ্ঠানে না গিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬ এর প্রতিনিধি মো. সাফায়েত ইসলাম।

গত ২২ মে প্রতারণার মামলায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় গায়ক নোবেলের জামিন মঞ্জুর করেন। 

এদিকে জামিনে বের হওয়ার পর গত সপ্তাহে একাধিক গণমাধ্যমে নোবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘পেছনের সব ভুল শুধরে আগের নোবেলে ফিরে যেতে চাই’— এমন খবরে তার ভক্তরা যেন কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। এর সপ্তাহ না পেরোতেই নিজের ওয়াদা ভুলে নড়াইলে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে এসে মদ্যপ অবস্থায় নতুন বিতর্কের জন্ম দেন নোবেল। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোটরসাইকেলটির মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যার পর আমার বাড়ির সামনের সড়কের পাশে মোটরসাইকেল পার্কিং করে বাড়ির ভেতরে ঢুকছিলাম। তখন মোটরসাইকেল পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে দৌড়ে যাই। সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি মোটরসাইকেলসহ একজন পড়ে আছে। তার মুখ দেখে চিনতে পারি তিনি গায়ক নোবেল। তারপরও সে এলোমেলোভাবে বলেন, আমি গোপালগঞ্জের গায়ক নোবেল। বোঝা যাচ্ছিল তিনি ড্রিংকস করেছেন।

তিনি বলেন, নোবেলকে এ অবস্থায় দেখে সত্যি আমি বিস্মিত হই! ভারতের সারেগামাপা অনুষ্ঠানের পর আমি তার একজন ভক্ত বনে যাই। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত নানা সময়ে তার বিতর্কিত খবরের কারণে হতাশ হয়েছি। এমন সম্ভাবনাময় শিল্পী এভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! আজ নিজ চোখে দেখলাম।

নোবেল মোটরসাইকেলের কোনো ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি নোবেলকে অনেক পছন্দ করতাম, তার এ অবস্থা দেখে কী আর বলব? তিনি সরি বলেছেন। পরে বড়দিয়া এলাকার ছোট ভাইয়েরা তাকে প্রাথমিক সেবা দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। 

ঘটনার সময়ে উপস্থিত বড়দিয়া এলাকার নাঈম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গায়ক নোবেল মদ খেয়ে আমাদের এলাকায় আগেও এসেছেন। এবার তিনি উল্টাপাল্টা বকছিলেন। 

এ বিষয়ে নোবেলের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। 

নোবেলের আত্মীয় ও স্থানীয় সাংবাদিক বাবলু মল্লিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গায়ক নোবেল কালিয়া উপজেলার বাগুডাঙ্গায় ফুফু বাড়ি বেড়াতে এসেছিলেন। বাগুডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে তিনি বিকেল ৩টার দিকে উপস্থিত হয়ে খালি গলায় একটি গান গেয়েছিলেন। সাড়ে ৩টার দিকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি ছোট ছেলে-মেয়েদের আবদারে সেলফিও তোলেন। পরে কোথায় যান তা আমার জানা নেই।

সজিব রহমান/কেএ