আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপে রাষ্ট্রবিরোধী কাজের অভিযোগ এনে বরিশালের বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এসএম এজাজ হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। ম্যানেজিং কমিটির কোনো সভা ছাড়াই তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) বাবুগঞ্জ উপজেলার বাবুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে এ ঘটনা ঘটে।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কলেজ সভাপতির সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ করে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন বলে স্বীকার করেছেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এসএম খলিলুর রহমান।

এদিকে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এসএম খলিলুর রহমান স্বাক্ষরিত সাময়িক বহিষ্কার আদেশে উল্লেখ করা হয়, প্রথমত শোক দিবস চলাকালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এসএম এজাজ হাসান কলেজ চত্বরে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। দ্বিতীয়ত শোক দিবসে ওই শিক্ষককে দেওয়া কালো ব্যাজ কলেজ ত্যাগ করার পূর্বে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সামনে খুলে নিন্দার ছলে ছুড়ে ফেলেন। যা অন্যায়, নিন্দনীয় এবং রাষ্ট্রবিরোধী বটে। এই দুই কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক এসএম এজাজ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই কলেজে আমি দীর্ঘ ২২ বছর শিক্ষকতা করছি। রাজনৈতিক কোনো নেতার প্রতি আমার ভিন্নমত থাকলে এত বছরে নিশ্চয়ই তা অন্তত শিক্ষার্থীদের দ্বারা হলেও প্রকাশ্যে আসতো। বাস্তবতায় কলেজে আমি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। এমনকি ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠানে সভামঞ্চ, ব্যানার সব কিছু আমি নিজ হাতে প্রস্তুত করেছি। রাজনীতি যেভাবেই করুন, কাউকে হত্যা আমি মেনে নিতে পারি না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করাও সঠিক কোনো কাজ ছিল না। সুতরাং তার স্মরণের অনুষ্ঠানে আমার বিরোধিতা কেন থাকবে? আমিতো রাষ্ট্রের চাকরি করি। রাষ্ট্র যে আয়োজন করেছে সেখানে আমার অংশগ্রহণ করা দায়িত্ব।

তিনি বলেন, দুপুর ১২টায় শোক দিবসের আয়োজন শেষ হয়। এরপর একটি মিটিং শেষে আমি কলেজ থেকে বিকেল ৩টায় বের হই। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি করা। হয়তো বুক চুলকাতে গিয়ে ব্যাজটি পড়ে যায়। গেট থেকে বের হয়ে যখন দেখি বুকে ব্যাজ নেই তখন অতিরিক্ত একটি আমার কাছে ছিল সেটি পরে নিই। বিশ্বাস না হলে যে কেউ ক্যাম্পাসের সিসি ক্যামেরায় দেখতে পারেন আমার বুকে ব্যাজ ছিল কিনা, অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম কিনা। অথচ সন্ধ্যায় আমাকে নোটিশ দেওয়া হলো বরখাস্তের। আমি বলবো বিনা দোষে আমাকে এই হয়রানি করা হচ্ছে।

কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল চিশতি বলেন, কোনো শিক্ষক বহিষ্কার করা বা কলেজের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে সভা করেই করার কথা। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সভা হয়নি। সম্ভবত কলেজ অধ্যক্ষ এবং সভাপতি দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সুতরাং শিক্ষক বরখাস্তের বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।

এ বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন অহমেদকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এসএম খলিলুর রহমান বলেন, ১৫ আগস্টের অনুষ্ঠান শেষে যাওয়ার পথে ওই শিক্ষক তার পরিহিত কালো ব্যাজ নাকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সামনে খুলে ছুড়ে ফেলেছে। সেই ব্যাজ নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমার দপ্তরে এসেছে। আমি নেতাদের জানাই গভর্নিং বডির কমিটির সঙ্গে আলাপ করে ব্যবস্থা নেওয়ার। অধ্যক্ষ হিসেবে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু দেখলাম তাদের (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের) দ্বারা কলেজের একটা ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক পর্যায়ে আমি সভাপতির সঙ্গে মোবাইলে আলাপ করায় সভাপতি ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার কথা বলেন। 

অধ্যক্ষ স্বীকার করেন আওয়ামী লীগ নেতাদের চাপের মুখে বরখাস্তের আদেশ লেখেন তিনি।

কলেজের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই শিক্ষকের ওপরে আওয়ামী লীগের নেতারা ক্ষিপ্ত ছিলেন। কোনো ইস্যু না পাওয়ায় কালো ব্যাজ খুলে রাখাকে ইস্যু করে এমন হট্টগোল শুরু করেন যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। নেতারা কলেজ অধ্যক্ষকে অবরুদ্ধ করে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেন। শিক্ষকদের সম্মান রক্ষায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কলেজ পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য শাহরিয়ার আহমেদ শিল্পী বলেন, ঘটনাস্থলে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তারা সকলেই বলেছেন ওই শিক্ষক যেভাবে কালো ব্যাজ খুলে ফেলেছেন তা মেনে নেওয়ার মতো না। নেতাকর্মীদের দাবির মুখেই সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

লিখিত অভিযোগ ও তদন্ত ছাড়াই বরখাস্ত কতটা যৌক্তিক- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আপনি বুঝতেছেন না। তাকেতো সাসপেন্ড করা হয়েছে। বরখাস্ত আর সাসপেন্ড এক না। লিখিত অভিযোগ না হলে প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে। তাছাড়া ওই শিক্ষক বিএনপি নেতা। কয়েকদিন আগেও তিনি সরকার বিরোধী কাজে জড়িত থেকে কারাগারে গেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এসব বিষয় সহ্য করতে পারেন না।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর