ভিক্ষুক-পথশিশুদের ক্ষুধা নিবারণ করে ‘খাবার বাড়ি’
জোহরের নামাজের পরপরই চলছে খাবার টেবিল সাজানোর প্রস্তুতি। কিছুক্ষণের মধ্যে আশপাশ থেকে পথশিশু, মানসিক ভারসাম্যহীন, ভিক্ষুক, হতদরিদ্র, উদ্বাস্তুরা খাবার খেতে হাজির হয়। তৃপ্তি করে পেট ভরে খাবার খেয়ে আবারও যার যার গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন তারা।
প্রতিদিনই এমন দৃশ্যের দেখা মেলে যশোরের শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি মডেল মাদরাসা প্রাঙ্গণে অবস্থিত পথ-শিশু ও পাগলদের খাবার বাড়িতে। 'ক্ষুধা লাগলে খেয়ে যান' এমন স্লোগানে করোনা মহামারির পর থেকে এভাবে পথ-শিশু, পাগল, ভিক্ষুকদের তিনবেলা ফ্রি খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে আসছেন শ্যামলাগাছি মডেল মাদরাসা পরিচালক এবং খাবারবাড়ির উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
মিজানুর রহমান জানান, করোনা মহামারির সময় পাগল, পথশিশু, উদ্বাস্তু মানুষদের খাবারের কষ্ট দেখে তিনি এ 'ফ্রি খাবার বাড়ি' প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে এখানে প্রতিদিন তিনবেলা ১০০ থেকে ১৫০ পাগল, পথশিশু, ভিক্ষুকরা খাবার খেয়ে থাকেন। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবারে খাবার বাড়িতে থাকে বিশেষ আয়োজন। খাবারের মধ্যে থাকে, সাদা ভাত, ডাল, সবজি, মাছ এবং মাংস। সারাদিনই একের পর এক খাবার বাড়িতে খাবার খেতে আসেন ক্ষুধার্তরা। কেউ এখানে বসে খান, আবার কেউ বাসায় নিয়ে যান।
মিজানুর রহমানের এই খাদ্য সেবা শুধুমাত্র খাবার বাড়িতেই সীমাবদ্ধ নয়। রাস্তায় পড়ে থাকা পাগল, ভিক্ষুকদেরও তিনবেলা খাবার পৌঁছে দেন তিনি।
শ্যামলাগাছি রেললাইনের পাশে বসবাস করেন স্বামী- সন্তানহারা আমেনা বেগম। তিনিও আসেন এ 'খাবার বাড়িতে' তিন বেলা খাবার খেতে। আমেনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'আমি অসুস্থ এজন্য আয় উপার্জন করতে পারি না। স্বামী- সন্তান কেউ নেই আমার। তিনবেলা এ খাবার বাড়িতে এসে খাবার খাই। এখানে ক্ষুধার্ত অবস্থায় এসে কোনোদিন ফিরে যেতে হয়নি।'
৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা রোকসানা বেগম। ক্রাচ ভর করে এসেছেন খাবার বাড়িতে খাবার খেতে। রোকসানা বেগম বলেন, 'আমিও অসহায়। ছেলেরা কেউ দেখে না। মিজান আমার ছেলের মতো। সে তার সাধ্যমতো আমাদের তিনবেলা খাওয়ায়। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন আরও তৌফিক দান করেন। সে যেন আরও ক্ষুধার্ত মানুষকে এভাবে খাওয়াতে পারে।
সুমন হোসোন নামে ৭ বছরের এক শিশু বলে, 'আমার বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। মা ভাটায় কাজ করে। এজন্য মিজান কাকা আমাকে এখানে এনেছে। আমি এখানে থাকি পড়াশোনা করি।'
শ্যামলাগাছি মডেল মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফিজ ইজার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষ খাবার খেতে আসেন। তাদের খাওয়াদাওয়া করানোর কাজটা আমরা করে থাকি। সবাই একবারে আসে না। সারাদিন দুইজন, তিনজন করে আসতে থাকে। অনেকে আবার খাবার বাড়িতে নিয়ে যায়।
শার্শা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আতিয়ার রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিজানুর রহমানের এই উদ্যোগ একটি মহৎ কাজ। সমাজের বিত্তবানেরা যদি এমন কাজের অংশীদার হয় তাহলে আমরা মনে করি আমাদের আশপাশের একটি মানুষও অনাহারে থাকবে না। আল্লাহ পাক তাকে আরও তৌফিক দান করুক।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে