টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে মুহুরী নদীর বাঁধের ৩টি অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দুই উপজেলার ৯টির বেশি গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে বন্যাদুর্গত এসব এলাকার মানুষজন দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে।

ভাঙনে প্লাবিত গ্রামগুলো হলো- উত্তর বরইয়া, বিজয়পুর, দক্ষিণ বরইয়া, উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।

সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে পরশুরাম উপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অলকা গ্রামে মুহুরী নদীর বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। এতে নোয়াপুর, পশ্চিম এলাকা ও ধনীকুন্ডা গ্রামের একটি অংশ প্লাবিত হয়। 

বাঁধ ভাঙনে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছরই এই সময়ে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। তখন প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা এসে কিছু ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে চলে যাওয়ার পর আর কেউ খোঁজ রাখে না।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, এই ধরনের বন্যা দেখে দেখে আমরা প্রায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি। প্রতিবারই বাঁধ ভাঙনের পর সামান্য কিছু মেরামত করা হয়। এতে আমাদের কোনো উপকারই হয় না। আমরা চাই মুহুরী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত করা হোক।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত বাঁধের বরইয়া ও দৌলতপুরের দুইটি এবং পরশুরামে একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি কমার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এদিকে দুপুরে ফুলগাজীতে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। এ সময় বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা এবং ৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, টেকসই বাঁধ মেরামতের জন্য ৭৩১ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ নিরীক্ষণ শেষে শুরু হবে।

বরইয়া এলাকার বাসিন্দা এনাম বলেন, রাত ২টা থেকে মসজিদের মাইকে ডেকে গ্রামের লোকজন একত্রিত করে বরইয়া এলাকার বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেছি। প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করেও পানির তীব্র স্রোতের সঙ্গে আমরা পারিনি। ঘরে হাঁটু সমান পানি নিয়ে কীভাবে রাত পার করবো সেই চিন্তায় আছি। 

ফুলগাজী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম জানান, ভাঙনের কারণে লোকালয়ের পাশাপাশি ফুলগাজী বাজারও প্লাবিত হয়েছে। এতে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

ফুলগাজী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কে এইচ এম মনজুরুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রায় ১২০ হেক্টর রোপা আমন ও ১০ হেক্টর বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে পানি নেমে যাওয়ার আগে প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব নয়। 

এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করায় ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফী উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে জানান, শ্রেণিকক্ষ পাঠদানের উপযোগী না হলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য প্রধান শিক্ষকদের বলা হয়েছে। 

তারেক চৌধুরী/এএএ