নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে না পারায় প্রতিবন্ধী ভাতা বন্ধ
ভোলার লালমোহনে মো. মহিউদ্দিন (৩৭) নামের এক প্রতিবন্ধী যুবককে মৃত দেখিয়ে অন্য আরেকজনের নামে ভাতা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চৌমুহনী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
মো. মহিউদ্দিন ওই এলাকার মাতাউল্লাহ চৌধুরী বাড়ির আফতার আলীর ছেলে।
বিজ্ঞাপন
প্রতিবন্ধী যুবক মহিউদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি প্রতিবন্ধী। এ জন্য ভাতার আবেদন করি। ওই আবেদনের ভিত্তিতে ২০০৭ সাল থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে আসছি। হঠাৎ করে ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ভাতার টাকা বন্ধ হয়ে যায়। ভাতা বন্ধ হওয়ার কারণ জানতে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি, আমি মারা গেছি। আমি মারা যাওয়ায় আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নাকি অন্যজনের নামের তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে আমি তো ‘মারা যাইনি, জীবিত আছি’ এটা প্রমাণ করতে বহুবার চেয়ারম্যান-মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বহুবার সমাজসেবা অফিসে গেছি। তবে এখন পর্যন্ত নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে না পারায় ওই ভাতা বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী ও এক সন্তান রয়েছে। ভাতার টাকায় তাদের নিয়ে কোনোরকমে দিন পার করতাম। তবে এখন ভাতা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে পারছি না। তাই ছোট ভাইয়ের দোকানে বসি। এ জন্য সে কিছু টাকা দেয়। তা দিয়ে এখন কোনোরকমে চলছি।
তার দাবি, খুব দ্রুত যেন ভাতাটি পুনরায় চালু করা হয়। এছাড়া জীবিত থাকার পরও যারা তাকে মৃত বলে ভাতা বন্ধ করেছে তাদেরও বিচার চান তিনি।
মহিউদ্দিনের বাবা মো. আফতার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর বয়সে সে (মহিউদ্দিন) টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর সাধ্যমতো চিকিৎসা করাই। তবে ওই জ্বরে তার দুই পা প্যারালাইজড হয়ে যায়। এরপর থেকে সে আর হাঁটা-চলা করতে পারছে না। তাই প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য তৎকালীন চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। ২০০৭ সাল থেকে মহিউদ্দিন নিয়মিত প্রতিবন্ধী ভাতা পেত। তবে বছরখানেক আগে তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, মহিউদ্দিন নাকি মারা গেছে। এ জন্য তার ভাতা অন্যজনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে মহিউদ্দিন তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছে। তাই আমার দাবি, শিগগিরই যেন মহিউদ্দিনকে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
রামগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহিউদ্দিনের বিষয়টি জানার পর তিনি যেন তার ভাতা ফিরে পায় সেজন্য আমি সমাজসেবা অফিসকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মাসুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এখানে যোগদান করেছি মাত্র কয়েক মাস হলো। এই ঘটনা আগের কর্মকর্তা থাকাকালীন সময়ে ঘটেছে। তাই এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না, মাত্র জেনেছি। ভুক্তভোগী ওই ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।
আবদুল হান্নান/এএএ