নীলফামারীর সৈয়দপুর দেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে একটি। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই শহর অনেক আগে থেকে প্রসিদ্ধ হলেও অনেকের কাছে রেলের শহর হিসেবে বেশি পরিচিত। এই রেলের শহর সৈয়দপুর রেলওয়ের ৪২৭ একর জমি অবৈধ দখলদারদের হাতে চলে গেছে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুসারে ইতোমধ্যে এসব জমির ১৫ দশমিক ২ একর সিএস, এসএ, আরএস ও বিএস জরিপের সময় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত এবং নামজারি করা হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, রেলওয়ে জমি দখলের সঙ্গে খোদ স্থানীয় ভূমি অফিস ও রেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। তাই প্রতিবেদন জমার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।

সৈয়দপুর রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শহরে রেলওয়ের ৮০০ একর ভূ-সম্পত্তির মধ্যে ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা গড়ে ওঠে। অবশিষ্ট জমির মধ্যে আছে রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ও কর্মচারীদের জন্য বসতবাড়ি। অব্যবহৃত জমির মধ্যে ৫৫ একর কৃষি, ২১ দশমিক ৩৮ একর জলাশয় ও ১ একর বাণিজ্যিক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২৫ দশমিক ২৫ একর জমি পৌরসভার কাছে আছে। আর স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত রেলওয়ের বাদবাকি ৪২৭ একর জমি দখল হয়ে গেছে। 

রেলওয়ে সূত্র আরও জানায়, ফিল্ড কানুনগো ৭ নম্বর কাচারি সৈয়দপুর কার্যালয়ের অধীনে বিমানবন্দরসংলগ্ন নীচু কলোনি নির্মাণের জন্য ১৯ দশমিক ২৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ২০১২ থেকে ২০২২ সালে সেই জমির মধ্যে ১৫ দশমিক ২ একর ভূমি বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। এসব জমির নিবন্ধন আর পুনঃনবায়ন করা হচ্ছে না। ফলে বছরে প্রায় ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০০৬-এর নির্দেশনা প্রতিপালন না করা। অধিগ্রহণ করা সব ভূমির স্বত্ব রেকর্ড সংরক্ষণ না করা, জমির সীমানা চিহ্নিত না করা, কৃষি, মৎস্য, বাণিজ্যিক প্রভৃতি জমির রেকর্ড সংরক্ষণ না করা এবং সব ধরনের জমির হিসাব রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ না করায় রেলের প্রকৃত জমির হিসাব সংরক্ষণে অনিয়ম হয়েছে।

এদিকে রেলওয়ের জায়গা দখল করে লাইন ঘেঁষে জাতীয় পার্টির উপজেলা শাখার পাকা অফিস ঘর (কার্যালয়) নির্মাণের অভিযোগ উঠে। এ নিয়ে জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে গত ১৬ মার্চ ‘রেলের জায়গা দখল করে জাতীয় পার্টির কার্যালয় নির্মাণ!’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রকাশের প্রায় চার মাস পর গত বুধবার সৈয়দপুর পৌর শহরের শেরে বাংলা সড়কে সাবেক টিএন্ডটি অফিসের বিপরীতে নির্মিত জাতীয় পার্টির উপজেলা কার্যালয়টি ভেঙে দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। 

রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়ন কারখানা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ রোবায়েতুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুধু জমি নয়, রেলওয়ের ১ হাজার ৪০০ বসতবাড়ির মধ্যে অর্ধেকের বেশি বেদখল হয়ে গেছে। রেলওয়ে কোয়ার্টার ভেঙে অনেক দখলদার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এগুলোতে নেসকো বিদ্যুৎ-সংযোগও দিয়েছে। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতি ও যোগসাজশেই রেলওয়ে ভূমি অন্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নামজারি হয়েছে।

রোবায়েতুর রহমান আরও বলেন, যারা রেলওয়েতে চাকরি করেন, তাদের মধ্যে সিংহভাগেরই নিজস্ব ঘরবাড়ি নেই। অবসর নেওয়ার পর তারা যে পরিমাণ টাকা পান, তা দিয়ে এক শতক জমিও কিনতে পারেন না। তাই রেলওয়ের অব্যবহৃত বা দখল হওয়া জমি উদ্ধার করে ও বসবাস অনুপযোগী বসতবাড়িগুলো ভেঙে ফ্ল্যাট করে স্বল্প কিস্তিতে রেলওয়ে কর্মচারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হোক। এতে রেলওয়েরও আয় হবে।

এ বিষয়ে ৭ নম্বর কাচারি সৈয়দপুর কার্যালয়ের কানুনগো জিয়াউল বলেন, বেদখল জমির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া রেলওয়ের জমি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্তি ও নামজারির বিষয়টি অডিট বিভাগকে জানানোসহ রেকর্ড সংশোধনী মামলা করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সব খতিয়ান সংগ্রহের কাজ শেষ হলেই মামলা করা হবে।

শরিফুল ইসলাম/এএএ