প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করে কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন মাসুম
ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াজাত ও পুনরায় বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মো. মাসুম হোসেন (৩২) নামে এক নতুন উদ্যোক্তা। গড়ে তুলেছেন মেসার্স আফিফ প্লাস্টিক হাউজ নামে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং কারখানা। এটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অনেকের কর্মসংস্থান। মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলাধীন কর্নপারা এলাকার হাইওয়ের রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছে তার এই কারখানা।
প্লাস্টিকের বর্জ্য রিসাইকেল করে তৈরি করা হচ্ছে প্লাস্টিক পণ্য। স্থানীয় বিভিন্ন প্লাস্টিক কারখানায় তা সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। মাদারীপুর অঞ্চলে এখন প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের এ ব্যবসার নতুন হওয়ায় জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন প্লাস্টিক বর্জ্যের দূষণ কমছে, একইসঙ্গে স্থানীয় পর্যায়েও তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে এসব পণ্য ঢাকার ইসলামবাগ ছাড়াও ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ভারতে এগুলো দিয়ে প্লাস্টিকের সুতা তৈরি করা হয়।
প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এমনই এক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আফিফ প্লাস্টিক হাউজ। স্থানীয় বিভিন্ন কারখানায় এখানে উৎপাদিত রিসাইকেলড প্লাস্টিকের কুচি সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এই প্রতিষ্ঠানটি দাঁড় করাতে তিনি ৩ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন। মো. মাসুম হোসেনের গড়ে তোলা মেসার্স আফিফ প্লাস্টিক হাউজ নামের এ কারখানার কল্যাণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে মাদারীপুর অঞ্চলের ৬০ জনেরও বেশি মানুষের।
সরেজমিনে মেসার্স আফিফ প্লাস্টিক হাউজের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানার আঙিনাজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। কর্মীরা প্লাস্টিকের বোতল বাছাই ও পরিষ্কার করার পর তা আবার টুকরো টুকরো করছেন মেশিনে। আরেকটি যন্ত্রের সাহায্যে রাসায়নিক মিশ্রিত পানি দিয়ে সেই টুকরো অংশগুলোকে ধোয়া হচ্ছে। পরে অন্য একটি যন্ত্রের মধ্যে ভেজা টুকরোগুলো শুকানো হচ্ছে।
একই এলাকার মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেনও প্লাস্টিকের বোতল প্রক্রিয়াজাত করেন। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রক্রিয়াজাতের পর ওইসব কাঁচামাল দিয়ে তার কারখানায় গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন।
বরিশাল গৌরনদী থেকে আসা কারখানার শ্রমিক ইয়াসমিন বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ কোনো কাজ করতে পারে না, তাই আমি এখানে কাজ করে পরিবার ও ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি।
একই কারখানার শ্রমিক সেলিনা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এসব ফেলে দেওয়া পণ্য থেকে বয়াম, জগ, চেয়ার, প্লাস্টিকের সুতা, তুলা, বয়ামের ঢাকনা, বালতি, বাইসাইকেলের পাদানিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। গ্রামের নারীরা এ কাজে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।
এ বিষয়ে মাদারীপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি হাফিজুর রহমান জাচ্চু নানা জানান, পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিক বোতল থেকে কুচি বানিয়ে বিদেশে রপ্তানির এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এসব উদ্যোগকে কাজে লাগাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। এতে একদিকে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান হবে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ও বাড়বে।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জামান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্লাস্টিক বোতল সেটি মেশিনে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে প্লাস্টিক কুচি তৈরি হচ্ছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। এতে যেমন পরিবেশ রক্ষা হচ্ছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ছে। এ উদ্যোগ কেন্দ্রীয়ভাবে বড় পরিসরে নেয়া প্রয়োজন। তাহলে প্লাস্টিকে আর পরিবেশ নষ্ট হবে না।
নতুন উদ্যোক্তা ও কারখানার মালিক মাসুম হোসেন ঢাকা পোস্টকে জানান, প্রতিদিন প্রায় ৫০ জন নারী ও ২১ জন পুরুষ শ্রমিক এখানে কাজ করেন। দিনশেষে প্রত্যেককে ৩০০-৪০০ টাকা করে দিতে হয়। চিকিৎসা, ঈদ বোনাস মাসিক ইনক্রিমেন্ট এমনকি তাদের মেয়ে বিয়ে দেওয়ার কিছু টাকা দেওয়া হয়। এছাড়াও তাদের আনুষঙ্গিক খরচ বহন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রসিদ খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশীয় পণ্য উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা একটি ভালো উদ্যোগ। এ জাতীয় ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদের ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।
রাকিব হাসান/এএএ