হেফাজতের নায়েবে আমিরের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল তার পদত্যাগের ঘোষণা প্রত্যাহার করেছেন। বুধবার (৩১ মার্চ) নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি এলাকায় রেলওয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে বিকেলে সাংবাদিকদের এ কথা জানান হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক।
প্রায় দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে নিজের গোসসা ভুলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাড়াঁন মাওলানা আবদুল আউয়াল।
বিজ্ঞাপন
বৈঠক শেষে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আমিরে হেফাজত আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরী হুজুরের নির্দেশে আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধি দল আবদুল আউয়াল হুজুরের সঙ্গে দেখা করতে এখানে এসেছি। কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমরা তা মীমাংসা করেছি। আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে আবদুল আউয়াল হুজুর তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।
এখন থেকে জেলা ও মহানগরের নেতারা আগের মতই একত্রে কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান বিরোধ মীমাংসা করতে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা।
এর আগে বিকেল ৩টায় ডিআইটি মসজিদে আসেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী ও মুফতি নাসির উদ্দিন মনির। তারা নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মহানগর ও জেলার নেতারা হরতালের দিনের পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই সময়ে কোনো বিরোধ না করে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠক শেষে মাওলানা মামুনুল হক সাংবাদিকদের বলেন, মাওলানা আবদুল আউয়াল আগের মতই দায়িত্ব পালন করবেন। সকল প্রকার মান অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবেই কাজ করবেন।
এ সময় গাড়ি পোড়ানো ও সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো প্রকার সহিংসতায় বিশ্বাসী নয়। হেফাজত কোনো ধরনের হামলা, মারধর, ভাঙচুর করেনি। এটা বহিরাগত কেউ করেছে। এটা সাবোটাজ হতে পারে। আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি, মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছি। অনেক জায়গায় হেফাজতের দায়িত্বশীলদের রাজপথ থেকে উৎখাত করতে প্রশাসন উদ্যত হয়েছে। সেখান থেকে কোথাও কোথাও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তা হেফাজতের পক্ষ থেকে করা হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের গুলিতে যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই গ্রামবাসী ও নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল। সেটা থেকেই স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সঞ্চার হয়ে থাকতে পারে। তার দায় হেফাজতের না।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ব্যাপারে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হেফাজতে ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে সব সময় ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় এবং তা আছে। ব্যক্তি পর্যায়ে কেউ ভুল বুঝে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। তবে তার সঙ্গে দায়িত্বশীলদের কোনো সম্পর্ক নেই। বন্দুকের নলে, গায়ের জোরে জনগণের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান না নেয়ার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান তিনি।
এর আগে গত ২৯ মার্চ বিকেলে নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর বলেছিলেন, আমরা কেন্দ্রে অভিযোগ করব। ঢাকা মহানগরে অভিযোগ দিয়েছি যে, এই সভাপতি আমাদের চলবে না। উনার অতীতের ইতিহাস এ রকম। উনি যখন হার্ডলাইনে দেখেন তখন পিছু হটেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল আওয়াল সাহেব সকাল ১০টায় যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই ঘোষণার সঙ্গে আমরা একমত ছিলাম না।
ওইদিনই রাতে শবে বরাত উপলক্ষে ডিআইটি সমজিদে বয়ানকালে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, ২৮ মার্চ হরতালের দিন সকালে মসজিদে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে আসেন। তারা মসজিদের গেটের সামনে তিনটি কামান, সাঁজোয়া যান পুলিশের গাড়ি দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, মিছিল বের করতে চাইলে অ্যাকশনে যাবে। তাদের ওপরের নির্দেশনা রয়েছে। প্রয়োজনে গুলি করবে।
তখন আমি সকলের জানমালের স্বার্থে মসজিদের গেটের বাইরে যেতে বারণ করি। কারণ আমাদের তো অস্ত্র নাই। কিন্তু মহানগরের অতি উৎসাহী নেতারা মিছিল করতে চেয়েছিলেন। যদি সেদিন মিছিল করতে গিয়ে আমাদের ওপর গুলি ছোড়া হতো, কেউ লাশ হতো তখন তো এ আবদুল আউয়ালকে দোষারোপ করা হতো। মসজিদে গুলি ছুড়লে ঝাঁঝরা হয়ে যেত। তখন আপনারাই বলতেন কেন লাশ হলো মানুষ। এ কেমন নেতৃত্ব। এসব নেতৃত্ব আমরা মানি না। তখন মেয়র আইভীসহ অনেকেই সুযোগ নিতেন আমাকে সরিয়ে দিতে।
তিনি আরও বলেছিলেন, মামলা হয়েছে। যদি আমরা মিছিল করার চিন্ত করতাম তাহলে সবগুলো মামলার আসামি হতাম আমিসহ সকলে। এ কারণে আমাদের লোকজনও অনেকেই ক্ষুব্ধ। তারা আজকে (সোমবার) ডিআইটি মসজিদে বাদ আসর দোয়া না করে দেওভোগে করেছে। কারণ আমাকে তো বাদ দিয়েই দিছে। তাই আমি আর দল করবো না। ভবিষ্যতে আর নেতৃত্ব দিব না। মসজিদ-মাদরাসা নিয়েই থাকবো। আমার এখন বয়স হয়েছে। তাই আমি ভবিষ্যতে আর নেতৃত্বে থাকবে না। আমি আমার জিম্মাদারি ছেড়ে দিলাম। আমি হেফাজত ইসলামের নেতৃত্বে আর থাকব না। আমার আমির পদ দরকার নেই। আমার পক্ষ থেকে আর কোনো দিন ঘোষণা আসবে না। তোমরা যারা অতি উৎসাহী আছো, তোমরা বাবা হেফাজতে ইসলাম করো।
রাজু আহমেদ/আরএআর