ঝালকাঠিতে ভান্ডারিয়া-বরিশালগামী একটি যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে ১৭ জন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৩০ যাত্রী আহত হন। নিহতদের মধ্যে ৮ জনই ভান্ডারিয়া উপজেলার। ঝালকাঠি থেকে ইতোমধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভান্ডারিয়া উপজেলার নিহতদের মরদেহ। স্বজনদের আহাজারীতে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টায় প্রায় ৬৫-৭০ জন যাত্রী নিয়ে বাশার স্মৃতি পরিবহন নামে একটি মিনিবাস বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গিয়ে ঝালকাঠি সদরের ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি পুকুরে পড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলেই ১৩ জন যাত্রী নিহত হন এবং কমপক্ষে ৩০ যাত্রী আহত হন। আহতদের ঝালকাঠী সদর হাসাপাতাল ও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভার্তি করা হলে সেখানে আর ৪ জন যাত্রী মারা যান।

নিহতদের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি ভান্ডারিয়া উপজেলায়। তারা সবাই বরিশালে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন। নিহত ওই ৮ জন হলেন,  দক্ষিণ ভান্ডারিয়ার পান্না বেপারীর ছেলে তারেক বেপারী (৪২), উত্তর পূর্ব ভান্ডারিয়া গ্রামের পিতা ও পুত্র ছালাম মোল্লা (৬৫) ও তার ছেলে শাহীন মোল্লা (২৫), পশারী বুনিয়া গ্রামের জালাল হাওলাদার এর মেয়ে সুমাইয়া (৬), পূর্ব ধাওয়া এলাকার রহিমা বেগম (৭০) এবং আবুল কালাম হাওলাদার (৫০) , উত্তর শিয়ালকাঠী গ্রামের ফজলুল হক মৃধার স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৭৫) ও তেলিখালী গ্রামের রাসেল সিকদার এর স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (২৪)। 

নিহত সালাম মোল্লার ছোট ছেলে রাসেল মোল্লা জানান, সে তার বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে বাবার চিকিৎসার জন্য বরিশালে যাচ্ছিলেন। চালকের পেছনের ছিটেই বসা ছিল সে। বাস ছাড়ার পর থেকে বাসের চালক বাড়তি যাত্রী ওঠানোর জন্য বাসের সুপারভাইজারের সঙ্গে কথা বলছিল। চালক অমনযোগী ছিল। গাড়ীটি ছত্রকান্দা বাসস্ট্যান্ড পার হওয়ার পরই অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পড়ে উল্টে গিয়ে যায়। এতে বেশিরভাগ যাত্রী পানিতে ডুবে মারা যায়। আল্লাহর রহমতে আমি বাসের জানালা থেকে বের হয়ে বেঁচে যাই। কিন্তু ঘটনাস্থলে আমার বাবা ও বড় ভাই ট্রাক ড্রাইভার শাহীন ঘটনাস্থলে নিহত হন।

নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের স্বজনদের আহাজারীতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মাহিনুর বেগম ও অন্তসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা আক্তার বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।  

ভান্ডারিয়া বাজারের নিহত ওষুধ ব্যবসায়ী তারেক বেপারীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শোকে তার স্ত্রী কেয়া অচেতন হয়ে পড়ে আছে। তার শ্বশুর কামাল হোসেন জানান, শিশু পুত্র মাহাদিকে (৭) নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিল তারেক। শিশুটি বেঁচে গেলেও তার বাবা ঘটনাস্থলে মারা যান। 

আহত শিশু পুত্র মাহাদি জানায়, বাসটি যখন পুকুরে পরে ডুবে যাচ্ছিল কে যেন তাকে জানালা দিয়ে টেনে বের করে আনে। দুর্ঘটনায় তার ডান হাতটি ভেঙে গেছে।

নিহত ৬ বছরের শিশু কন্যা সুমাইয়ার মা পিয়ারা বেগম জানান, মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। পথে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে মেয়েটি মারা যায়। আমি কোনোরকমে জানালা থেকে মাথা বের করে মেয়েটির হাতের কাছে পেয়ে তাকে নিয়ে বের হই। ততক্ষণে দেখি সে আর নাই।  

পূর্ব ধাওয়া গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ জানান, পশাবুনিয়া জামে মসজিদের ইমাম আবুল কালাম হাওলাদার তার মা রহিমা বেগমকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলেন। দুর্ঘটনায় দুজনেই মারা গেছেন। আবুল কালামই ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার স্ত্রী, ৩ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। 

ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম জহিরুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত ১৭ জন মারা গেছে। সকলের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে ৮ জনের বাড়ি ভান্ডারিয়ায়। এছাড়া রাজাপুরের ২ জন এবং কাঠালিয়ার একজন, বাকেরগঞ্জের একজন, মেহেন্দি গঞ্জের ২ জন, মঠবাড়িয়ার একজন।

আবীর হাসান/আরকে