পাঁচ বছরের প্রবাস জীবন শেষে মাত্র ছয় দিন আগে সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন রাসেল সিকদার। বাড়ি ফেরার পর আজই স্ত্রী সাদিয়াকে (২৪) নিয়ে রওনা হন শ্বশুড়বাড়ি শরীয়তপুরে। ধুমধাম আয়োজনও চলছিল শরীয়তপুরে। ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল পৌঁছে সেখান থেকে শরীয়তপুরের গাড়িতে উঠার কথা ছিল।

কিন্তু এই যাত্রায় স্ত্রীকে নিয়ে আর শ্বশুরবাড়ি যাওয়া হলো না রাসেল সিকদারের। ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় বাস দুর্ঘটনায় স্ত্রী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রাসেল আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। রাসেলের ছোট ভাই রাকিব সিকদার একবার ভাবির মরদেহের কাছে যান আরেকবার ভাইয়ের বিছানার কাছে।

তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমাদের পরিবারটি এলোমেলো হয়ে গেল। পাঁচ বছর পর গত ছয় দিন আগে দেশে ফিরে ভাবিকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন ভাইয়া। কিন্তু তার সব শেষ হয়ে গেল।

শুধু রাসেল সিকদার নন এরকম ১৭টি পরিবারের স্বজনদের কান্না, আর্তনাদে ভারী হয়ে হয়ে উঠেছে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্য দিনের মতো বহির্বিভাগের চিকিৎসা সাময়িক বন্ধ রেখে চারদিকের গেট আটকে দিয়ে শুধু দুর্ঘটনায় স্বজন হারানোদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন।

বাবা ও ভাই হারানো পূর্ব ভান্ডারিয়া এলাকার বাসিন্দা রাসেল মোল্লা বলেন, আমার বাবা সালাম মোল্লা (৭০) ও ভাই শাহীন মোল্লা (৪০) নিহত হয়েছেন। আমরা বাবার চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। বাসচালকের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বেপরোয়া চালাচ্ছিলেন আর যাত্রীদের সঙ্গে তর্ক করছিলেন।

গুরুতর আহত রাসেল মোল্লাও বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন দুজনকে হারানোর শোকে। বাসচালকের প্রকাশ্য শাস্তি চান তিনি।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম বলেন, হাসপাতালে স্বজনহারাদের সঙ্গে কথা বলেছি, সান্ত্বনা দিয়েছি। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। এছাড়া আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে যাত্রী নিয়ে ঝালকাঠি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের ছত্রকান্দা নামক স্থানে একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের একটি পুকুরে পড়ে যায়। 
দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত অবস্থায় ৩৫ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ