পদ্মায় নিখোঁজ দুই নাতির জন্য আহাজারি করতে করতে নদী পাড়ে আসেন জোসনা বেগম (৬২)। জোসনার হাতে নিখোঁজ নাতি সিয়ামের নতুন জামা। বিয়ের অনুষ্ঠানে আসার জন্য কেনা হয়েছিল জামাটি। কিন্তু পড়তে পারলো না সিয়াম। নাতির নতুন জামা হাতে নিয়ে নদীর ধারে বিলাপ করতে করতে বলছেন, 'ও আল্লাহ মরা হলেও ফিরা দাও। আমি দেখব। ওর ছায়া খানটা আমি দেখব।'

জোসনার সঙ্গে পদ্মার পাড়ে এসেছেন নিহত সিয়ামের মা সিমা বেগম। সঙ্গে রয়েছেন সাজিদের দাদিও। তারা নিহত স্বজনদের মরদেহ পাওয়ার অপেক্ষা করছেন। একই সঙ্গে স্বজনদের স্মৃতি মনে করে আহাজারি করছেন। একবারের জন্য হলেও আপনজনকে শেষ দেখাটা দেখতে চান তারা।

এর আগে শুক্রবার (২১ জুলাই) বেলা ১২টার দিকে ওই এলাকার পদ্মা নদীতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হয় দুই কিশোর। তারা হলো- চর সাতবাড়িয়া গ্রামের মো. শুকুর আলীর ছেলে মো. সিয়াম (১১) ও চরশ্যামপুর এলাকার নেকবর আলীর ছেলে মো. সাজিদ (১২)। তাদের নিখোঁজ হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পেরোলেও এখনও তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাদের উদ্ধারে কাজ করছে। বেলা ১১টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিখোঁজ দুজনকে পাওয়া যায়নি। 

আরও পড়ুন : বিয়ের আনন্দে স্বজন হারানোর বিষাদ

জোসনা আরও বলেন, আমার লাতির জামা। আমার ব্যাটার বাড়িতে বিহ্যা (বিয়ে) খ্যাতে আসিছিল। তিন দিন থ্যাকবে বুলি। গাঙ্গে গা ধুতে এসেছিল। গা ধুয়ে গিয়ে খানার ভাত গোস্ত খাবে। বাড়িতে মানা করলে শুনো না।

নিখোঁজ সিয়ামের মা সীমা বেগমও পদ্মার ধারে বসে আহাজারিতে বলেন, 'ও বাপ তোকে কত বুলিছি তুই গাঙ্গে আসিসনি। ও বাপ তুই কতি গেলি। ও বাপ তুই পানিতে ডোবার সময় কত হাঁচুর পাঁচুর করেছিস। কতই পানি খ্যাচিস।' 

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি লিডার আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। পদ্মার স্রোতের কারণে উদ্ধার অভিযানে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। তিনজন ডুবুরি এই উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছেন।

শাহিনুল আশিক/আরকে