নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলা সদর থেকে সাজিউড়া বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়ক দিয়েই উপজেলা পরিষদে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হওয়ায় যাতায়াতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ জনগণের।

সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের গর্তগুলোতে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হয় এবং গাড়ি চলাচলের সময় কাদাপানি ছিটকে অনেকেরই জামা-কাপড়ও নষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও সড়কটির সংস্কার না হওয়ায় জরাজীর্ণ এ সড়কের বিভিন্ন গর্তে পড়ে প্রায়ই বিকল হচ্ছে যানবাহন। এমনকি ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। বর্তমানে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

বিশেষ করে এ সড়ক ব্যবহার করে উপজেলা পরিষদ এলাকায় থাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়সহ সরকারি সকল দপ্তরগুলোতে সেবা নিতে আসেন উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মানুষ। এলাকার প্রসূতি মা ও জরুরি রোগীদেরও এই সড়ক দিয়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। 

দুর্ভোগ সহ্য করেই দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা এ সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনসহ সাধারণ পথচারীদের। তবে রাস্তার এ বেহাল দশা হলেও স্থানীয় এলজিইডি, পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসেনি জনদুর্ভোগের এ চিত্র। তাই চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সড়কটির পৌরসভার অংশে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে একাকার হয়ে যায়। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় ছোট বড় যানবাহন থেকে শুরু করে পথচারীদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে চলাচল করে যানবাহনগুলো। অথচ সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে না। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। যে কারণে যাত্রী ও যানবাহন চালকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 

অপরদিকে সড়কের পাশে থাকা পৌরসভার ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন যাবত ময়লা-আবর্জনায় ভরাট রয়েছে। তাই পানি নিষ্কাশনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে বৃষ্টি হলেই সড়কটির পৌরসভার অংশে হাঁটু পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।  চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির ফলে সড়কটি পানিতে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। 

তারা জানান, পৌরশহরের সাজিউড়া মোড় থেকে সাবরেজিস্ট্রি অফিস মোড় পর্যন্ত সড়কটি বৃষ্টিতে পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পাশে পৌরসভার নির্মিত ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন ধরে ময়লা-আবর্জনায় ভরাট থাকায় রাস্তায় জমে থাকা পানি সরছে না। এ অবস্থায় সড়কটিতে সব সময়ই ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি জমে থাকে। 

সড়কটির পাশে থাকা কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক আবুল কাশেম আকন্দ জানান, এই সড়কটিতে চলাচলকারী প্রতিটি মানুষকেই চরম ভোগান্তিতে চলাচল করতে হয়। এতে করে এই সড়কে চলাচলকারী প্রতিটা মানুষ সরকারের উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে কথা বলে। তাছাড়া কিছু দিন আগে দেখলাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সড়কে খানাখন্দে কিছু ইট বালু দিয়েছিল কিন্তু রাস্তাটি যেই ছিল, সেই অবস্থায় থেকে গেল, জনগণের কোনো কাজেই আসলো না।

সাইফুল ইসলাম নামে এক অটোরিকশা চালক বলেন, এই সড়কে চলতে গিয়ে আমাদের যানবাহন প্রায় দিনই বিকল হয়ে যায়। ফলে গোটা দিনের রোজগারই চলে যায় গাড়ি মেরামত করতে। এমন হলে আমরা সংসার চালাব কী করে।

স্থানীয় শিক্ষার্থী নাবিল ভূইয়া বলেন, গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে খুব ভয় লাগে। তবু ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়েই চলতে হচ্ছে। সড়কটি ঠিক করে দিলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হতো।

চিকিৎসা নিতে আসা সালমা আক্তার নামে এক রোগী বলেন, চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলে এই ভাঙাচোরা সড়কটি দিয়েই যেতে হয়। এতে আরও বেশি অসুস্থ হতে হয়। কিন্তু জীবন বাঁচানোর তাগিদে এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে। 

স্থানীয় চিরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল কবীর খান বলেন, কেন্দুয়া থেকে আমার ইউনিয়নের সাজিউড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশার জন্য সাধারণ জনগণ খুব কষ্ট করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কারের জন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কেন্দুয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হোসেন এ বিষয়ে বলেন, রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল মহোদয়ের সাথে কথা বলে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বর্তমান অর্থবছরেই অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু আমরা তা পাইনি। আশা করি, আগামী অর্থ বছরের শুরুতে এই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য বরাদ্দ পেয়ে যাব। বরাদ্দ পেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

মো. জিয়াউর রহমান/এএএ