পাবনা সদর আসনের (পাবনা-৫) সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শেখ রাসেল আলী মাসুদ ও তার স্ত্রী নাছরিন আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুর্নীতি দমন কমিশন পাবনার সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. খাইরুল হক বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।  

শেখ রাসেল আলী মাসুদ ওরফে ভিপি মাসুদ পাবনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও তার স্ত্রী নাছরিন আক্তার পাবনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরি করেন। 

মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, পাবনা সদরের রামচন্দ্রপুর মহল্লার আব্দুল করিমের ছেলে শেখ রাসেল আলী মাসুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় দুদক থেকে। তিনি সম্পদ বিবরণী ফরম স্বাক্ষরসহ উত্তোলন করলেও পরবর্তীতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (বিবরণী গ্রহণের ২১ দিনের মধ্যে) দাখিল করেননি।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাসুদের সার্বিক আয় অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯২৯ টাকার স্থাবর ও ৪১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪২ টাকার অস্থাবরসহ মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৮ টাকা। তিনি বিভিন্ন সময় মোট ২৮ লাখ ২৩ হাজার ৮০৬ টাকা পারিবারিক ও অন্যান্য উপায়ে ব্যয় করেছেন। অর্থাৎ তার মোট অর্জিত সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ৩৮ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮৪ টাকা। এই সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া গেছে, ১ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার ৭০৫ টাকা। সবমিলিয়ে তার ১ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৯৭৯ টাকা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ।

অপরদিকে মাসুদের স্ত্রী সিএইচসিপি নাছরিন আক্তার দুদকের জারীকৃত সম্পদ বিবরণী ফরম উত্তোলন করলেও কমিশনে দাখিল না করে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ২৭ লাখ ২ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন পূর্বক ভোগ দখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাই মাসুদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

দুদক সমন্বিত কার্যালয় পাবনার উপ-পরিচালক মো. খাইরুল হক বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসে তাদের স্বামী-স্ত্রীর জ্ঞাত বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অপরাধ প্রমাণিত হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শেখ রাসেল আলী মাসুদ বলেন, আমি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাকে বরাবরই একটি মহল বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। দুদকের মামলাও তার অংশ। আমি আইনগতভাবেই মোকাবিলা করবো।

দুদকের সঙ্গে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র কীসের জানতে চাইলে মাসুদ বলেন, আমাকে গত ৬ বছর ধরে একটি মহল দুদকসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। 

সম্পদ বিবরণী দাখিল করেননি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিবরণী দিয়েছি। কিন্তু তারা মামলা করবেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি আইগতভাবে মামলা মোকাবিলা করবো।

তবে পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, শেখ রাসেল আলী মাসুদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলার নথিতে শেখ রাসেল আলী মাসুদকে আমার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি তথ্যগত ভুল। কারণ আমার পিএস হিসেবে শেখ রাসেল আলী মাসুদকে কখনোই দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তিনি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রাজনৈতিক ও দলীয় কর্মসূচিতে আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি পেশায় একজন ঠিকাদার। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটা তার ব্যক্তিগত দায়ভার। দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধানকালে আমি কখনোই কোনো প্রভাব খাটানো বা পক্ষপাতিত্ব করার অনুরোধ করিনি।

রাকিব হাসনাত/এএএ