পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একইসঙ্গে বাবা ছেলে প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও প্রচারণা চালাচ্ছেন একসাথে। ভোটাররা বলছেন, ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট বাড়িয়ে প্রভাব খাটাতেই এই কৌশল অবলম্বন করেছেন তারা।

দুমকী উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মো. আজাহার মৃধা (আনারস), তার ছেলে মো. মাহমুদ হাসান (ঘোড়া) ও মো. আমিনুল ইসলাম ছালাম (নৌকা) প্রতীক নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু ছেলে মো. মাহমুদ হাসান তার (ঘোড়া) প্রতীকে প্রচারণা চালানোর কথা থাকলেও তিনি তার বাবার আনারস প্রতীকের জন্য ভোট চাচ্ছেন। অথচ তার নিজের ঘোড়া মার্কার কোনো প্রচার প্রচারণা এমনকি পোস্টারও দেখা যায়নি ইউনিয়নে। এ নিয়ে ভোটারদের মাঝে নানামুখী আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে পুরো ইউনিয়নে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আগে থাকতেই প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন মো. আজহার মৃর্ধা। তবে তার বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপির অভিযোগ থাকায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার হতে পারে বলে কৌশলে পুত্র মাহমুদ হাসানকে দিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করান। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন অফিস থেকে আজহার মৃর্ধার মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও ঋণ পরিশোধ করে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি, কিন্তু ছেলে মাহমুদ হাসানের প্রার্থিতা কৌশলগত কারণে প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনের সময়ে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে দ্বিগুণ এজেন্ট থাকায় এর প্রভাব ভোটারদের মাঝে পড়বে বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। আগামীকাল সোমবার (১৭ জুলাই) ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার শ্রীরামপুর ও লেবুখালী ইউপিতে এক সঙ্গে ভোটগ্রহণ করা হবে।

শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ভোটার মোহাম্মদ কালাম হোসেন বলেন, তারা দুজন মিলে আনারস প্রতীকের প্রচার প্রচারণা করে যাচ্ছেন। ছেলের ঘোড়া মার্কার কোনো প্রচারণা বা পোস্টার ইউনিয়নে দেখা যায়নি। এতে বোঝাই যায় বাবা ও ছেলে মিলে কৌশলগত ভাবে প্রার্থী হয়েছে। তাদের ভোটকেন্দ্রের কক্ষগুলোতে দুজনেরই এজেন্ট থাকবে মনে হয়। তারা হয়তো এটাই চেয়েছিল।

শ্রীরামপুর ইউপির নারী ভোটার রহিমা বেগম বলেন, ‌‌‘ছালাম মিয়া আগের চেয়ারম্যান হেরে মোরা চিনি। হুনছি আজাহার মৃধা ও হের পোলায়ও খাড়াইছে। পোলারে এহোনো দেহিনাই ভোট চাইতে। তয় যে ভালো কাম হরবো মোরা হেরেই ভোট দিমু। বাপ পোলায় নির্বাচন করছে প্রশ্নে তিনি আবার বলেন, ট্যাহা আছে বাপ পোলায় ক্যা বউও নির্বাচন হরতে পারে আমাগো কিছু কবার নাই।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাহার মৃধার (আনারস মার্কা) সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা নিজেরাই খুব আশঙ্কায় আছি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে। নৌকা মার্কার প্রার্থীরা প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করছেন। আমাকে উঠান বৈঠক পর্যন্ত করতে দেয়নি কিন্তু আমি জনগণের ভালোবাসা নিয়ে আছি। আপনাদের দুজনের এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে থাকবে এতে প্রভাব পড়বে কিনা সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এতে কোনো প্রভাব পড়বে না, আমার ছেলে তার মত নির্বাচন করছে আমি আমার মত নির্বাচন করছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আজাহার মৃধার ছেলে মাহমুদ হাসানের (ঘোড়া মার্কা) মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, নির্বাচন করায় পিতার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতির হয়। অর্থ সঙ্কটে পোস্টার ছাপাতে পারেননি। ভোট কেন্দ্রে দ্বিগুণ এজেন্ট দিয়ে প্রভাব বিস্তার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমরা অন্যায় কিছু করলে প্রশাসন তো বসে থাকবে না। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে প্রত্যেক প্রার্থীই তার এজেন্ট দিতে পারবে এতে কোনো বাঁধা নেই। বাবা ছেলের প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো ধরনের অপরাধ করার সুযোগ নেই এই নির্বাচনে। অভিযোগ আসলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

মাহমুদ হাসান রায়হান/এএএ