সৌদি আরবের দাম্মামে ফার্নিচারের কারখানায় আগুনে ৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় সৌদির হুফুফ শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহতের মধ্যে রাজশাহীর ৪ জন, নওগাঁর ২ জন, নাটোর ও মাদারীপুরের ১ জন করে রয়েছেন। প্রবাসীদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে নিহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

নিহতরা হলেন, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়ার জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন, একই এলাকার জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, শাহাদাত হোসাইনের ছেলে মো. আরিফ, বাগমারার বড় মাধাইমুরির আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার, নওগাঁর আত্রাই উপজেলার উদয়পুরের মন্ডল পাড়ার মৃত রহমান সরদারের ছেলে বারেক সরদার (৪৫), একই উপজেলার শাহাগোলা ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মৃত আজিজার প্রামাণিকের ছেলে রমজান আলী (৩৩), নাটোরের নলডাঙ্গার খাজুরা ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে ওবায়দুল হক (৩৩) ও মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার আলিনগর ইউনিয়নের সস্তাল গ্রামের ইউনুস ঢালী ছেলে জুবায়ের ঢালী। তাদের মরদেহ হুফুফ কিং ফাহাদ মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

বাগমারা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, কিছুক্ষণ আগেও আমি থানার ডিউটি অফিসারের সাথে কথা বললাম। এখন পর্যন্ত কেউ বিষয়টি আমাদের জানাননি। তবে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছ থেকে মৃত্যুর খবর জানতে পেরেছি।

নিহত বারেক সরদারের পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বারেক ২০০৬ সালে সৌদি আরবে যান। সবশেষ ২০১০ সালে ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন তিনি। এরপর কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান। তার দুই মেয়ে রয়েছে। সৌদির রাজধানী রিয়াদ থেকে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দূরে সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকায় বিকেলে ফার্নিচার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান তিনি।

নিহত বারেক সরদারের বড় ভাই শাহাদত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল বারেক। তার মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়লো। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে। ভাইয়ের লাশ শেষবারের মতো দেখতে পাবো কি না জানি না। অসহায় পরিবারটিকে আর্থিক সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি

আত্রাই থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান সরকার বলেন, বারেক সরদারের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। বর্তমানে সৌদিতে মরদেহটি কী অবস্থায় আছে তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে, শনিবার (১৫ জুলাই)  দুপুরে নিহত ওবায়দুল হকের  বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, স্বজন ও প্রতিবেশীদের শোকের মাতম।  তারা জানান, ব্যক্তি জীবনে অবিবাহিত ওবাইদুল সংসারে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। ৩৩ বছরের যুবক ওবাইদুলের সাথে পরিবারের অন্যদের সর্বশেষ কথা হয়েছে ঈদের দিন।

নিহত ওবায়দুলের মা রাহেলা বিবি জানান, পরিবারে সাত ভাই-বোনের মধ্যে ওবাইদুল ছিল সবার ছোট। সংসারের অভাব মেটাতে ধারদেনা করে ২০১৯ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। আজ শনিবার সকালে তিনি ওবাইদুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর পান। সরকারের কাছে পরিবারের দাবি তার মরদেহ যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করেন।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোজিনা খাতুন জানান, তিনি স্থানীয় ইউপি চেয়ার‌ম্যান সোহরাব হোসেনের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছেন। পরিবারের সদস্যরা মরদেহ ফিরে পাওয়ার জন্য একটি লিখিত আবেদন করেছেন।

আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, নিহত প্রবাসীর পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খোঁজ নেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মরদেহগুলো দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

প্রসঙ্গত, সৌদি আরবের দাম্মামের হুফুফ শহরে ফার্নিচারের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৮ জন বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। 

শাহিনুল আশিক/এএএ