স্বপ্ন আইন পেশা থাকলেও শখ ছিল বাগান করার। তাই আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেও এ পেশায় যুক্ত হননি। গ্রামে ফিরে এসে শুরু করেন আম বাগান। শুরুতে ১০ কাঠা জমিতে বাগান গড়ে তুললেও আজ তার বাগানের পরিধি ১৮ বিঘা।

এই বাগানে নামিদামি জাতের আম চাষ করেন তিনি। এতে তার বছরে আয় কোটি টাকা। বলছিলাম পঞ্চগড়ের মাসুদ রানার কথা। পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় তিনি গড়ে তোলেন বৃহৎ এই ফলের বাগান। 

বাগানে বাহারি জাতের সব ভিনদেশি আম। আমগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। আমসহ বাহারি ফল ও গাছের চারা উৎপাদন করে বছরে কোটি টাকা আয় তার।

মাসুদ রানার বাড়ি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারীর বলরামপুর ইউনিয়ন ও ঠাকুরগাঁওয়ের দেবীপুর ইউনিয়নের মাঝামাঝি শ্যামাগাঁও গ্রামে। গ্রামের স্কুল শিক্ষক মজিবর রহমানের ছেলে তিনি। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে শুরু করেন ফলের বাগান। তার আমবাগানের বাণিজ্যিক সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন শিক্ষিত বেকাররাও। অনেকে তার বাগান থেকে গাছের চারা কিনে বাগান গড়ে তুলছেন।

মাসুদ রানা বলেন, আইন পেশা স্বপ্ন ছিল। তাই আইন নিয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছি। কিন্তু শখ ছিল বাগানের। ২০১৮ সালে দুই লাখ টাকা দিয়ে ১০ কাঠা জমিতে গড়ে তুলি বাগান। তা বেড়ে এখন ১৮ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে। এ বাগানে বিশ্বের নামিদামি জাতের আম রয়েছে। এসব আমের বংশ বিস্তার ও চারা তৈরি করছি। আমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন্যান্য বিদেশি ফলও।

তিনি আরও বলেন, চলতি বছর প্রায় ৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছি। আর গাছের চারা বিক্রি করেছি প্রায় ৫৭ লাখ টাকা। আরও ১০ লাখ টাকার চারা গাছ বিক্রির আশা করছি। আম ছাড়াও বাগানে চাষ হচ্ছে মাল্টা, কমলা, ত্বিন ফল, আঙুর, লেবু ও মালটাসহ কয়েকজাতের আপেল। তুরস্ক ও জার্মানি থেকে ত্বিন ফল, কমলা, আঙুর ও মালটার জাত সংগ্রহ করেছি। কমলা ও মালটা ফল এবং চারা গাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় হতে পারে।

তার বাগানে ৬৫ জাতের আম রয়েছে। জাতগুলোর মধ্যে চিয়াংমাই, রেড আইভরি, কিং অব চাকাপাত, আলফান্সো, থ্রি-টেস্ট, কাটিমন, থাই ব্যানানা, ন্যাম ডকসাই সিমুয়াং, পালমার, কিউজাই, হানিডিউ, ব্ল্যাকস্টোন, ব্রুরুনাই কিং, মিয়াজাকি (সূর্যডিম) ও বারি-৪ উল্লেখযোগ্য। এসব আমের মধ্যে ১৫/১৭ জাতের আম বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন তিনি। জাত ভেদে এসব আম ২০০-৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে এসব আম। আগামী বছর বিদেশেও আম রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে তার। বাগানের উৎপাদিত আমের চাহিদা অনেক। এই আমগুলোর জাত সংগ্রহ করা হয়েছে থাইল্যান্ড থেকে।

বাগান ঘিরে অ্যাগ্রো ট্যুরিজম গড়ার স্বপ্ন দেখছেন মাসুদ রানা। তাই তার প্রজেক্ট বাগানের নাম দিয়েছেন ‘ঠাকুরগাঁও অ্যাগ্রো ট্যুরিজম অ্যান্ড নার্সারি’। তার নার্সারির সব চারা গাছ উন্নত জাতের। এই জাতের চারার খাগড়াছড়ি ও বরিশালে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সামাজিক মাধ্যম ও অনলাইনে চারা গাছ নিয়ে কাজ করে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তিনি। 

তার বাগান ঘিরে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। বর্তমানে তার বাগানে কাজ করছেন ১০-১৫ জন। তাদের মধ্যে কেউ গাছের কলম তৈরি করেন, কেউ পরিচর্যার কাজ ও কেউ বাগানের ফল তুলে তা প্যাকেজিংয়ের কাজ করেন। দিনশেষে ভালো আয় করেন তারা। এসব শ্রমিকদের কয়েকজন চারা তৈরির কাজ করেন।

পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী রবিউল ইসলাম ও দুলাল উদ্দিন জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরেই মাসুদ রানার বাগানে চারা তৈরির কাজ করছেন। চুক্তিভিত্তিক কাজ হিসেবে প্রতিদিন ৬০০/৮০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পান তারা। সে হিসেবে মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা আয় তাদের। এ আয় দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই আছেন। দুলাল উদ্দিন বলেন, এ আয় দিয়ে আমার এক ছেলে অনার্স পড়ছে ও আরেক ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। এখানে কাজ করে ভালোই আছি।

মাসুদ রানা তার বাগানকে ‘অ্যাগ্রো ট্যুরিজম’ হিসেবে গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানেরও উদ্যোগ নেন তিনি। এছাড়াও বাগান থেকে উৎপাদিত ফল দিয়ে জুস তৈরির কারখানা গড়ার ইচ্ছে আছে তার। সেই সাথে বৃহৎ বাগানের ভিতর পর্যটকদের অবকাশ বিনোদনের জন্য বিভিন্ন স্থাপনাও গড়ে তুলতে চান তিনি। বাগান দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন অনেকে। নিচ্ছেন নানান পরামর্শ। কৃষি নিয়ে পড়ালেখা করছেন এমন অনেক শিক্ষার্থীরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন পরামর্শ নেন তার কাছ থেকে। তাদের বাগান বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শও দেন তিনি। 

এসকে দোয়েল/এএএ