পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় ছাত্রলীগের তিনটি কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল জেলা ছাত্রলীগ। তবে কমিটি অনুমোদনের দুই ঘণ্টার ব্যবধানে তা স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। টাকার বিনিময়ে কমিটি ঘোষণা করার প্রমাণ পাওয়ায় কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

তিনি বলেন, পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগ কলাপাড়া উপজেলার তিনটি কমিটি ঘোষণা করেছিল সোমবার। কমিটি ঘোষণা নিয়ে আমাদের কাছে বেশি কিছু অভিযোগ ও প্রামাণ আসে। এজন্য ঘোষিত কমিটিগুলো স্থগিত করা হয়েছে। অভিযোগ ও কমিটি গঠন নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জানা গেছে, গতকাল সোমবার (১০ জুলাই) কলাপাড়া উপজেলা, পৌর ও সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করেন পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক তানভির। ঘোষিত কমিটিতে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয় হাসিবুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় তারিকুল ইসলামকে। কলাপাড়া পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয় রাকিবুল হাসান রাব্বিকে, সম্পাদক করা হয় রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে। সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয় জসিম উদ্দিন জেতুকে ও সম্পাদক করা হয় মিজানুর রহমান মুসাকে। তিনটি কমিটিই ৮-১০ জন করে দিয়ে অসম্পূর্ণ রাখা হয়। 

সোমবার সন্ধ্যায় নতুন তিনটি কমিটি ঘোষণা করার পরপরই ব্যাপক সমালোচনার শুরু হয় কলাপাড়া উপজেলায়। এমনকি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদকের সঙ্গে বিভিন্ন ছাত্রনেতার কমিটি বাণিজ্যের অডিও রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে টাকা লেনদেনের ছবি পোস্ট করেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার ফেসবুকে টাকা ভর্তি ব্যাগ এবং টাকা দেওয়ার প্রমাণ সম্বলিত কিছু ছবি পোস্ট করেন। পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলামের সঙ্গে তার মুঠোফোনে কথোপকথনের রেকর্ড পোস্ট করেন।

এছাড়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির হোসেনের সঙ্গে উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি নাজমুল হকের কথোপকথনও ভাইরাল হয়েছে। কমিটির বিনিময়ে টাকা কোথায় পৌঁছে দেবে সেই ঠিকানা নিয়ে আলাপ হচ্ছিল।

কলাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদার বলেন, আমি সভাপতি প্রার্থী হতে চাইনি। এরপরও জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম আমাকে প্রার্থী করেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ২০ হাজার, ৩০ হাজার এমনকি পাঁচ হাজার টাকা করেও নিয়েছেন। ধাপে ধাপে আমার কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন। তার এক খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমেও টাকা নিয়েছেন। সর্বশেষ কোরবানির চার থেকে পাঁচ দিন আগে আমাকে ফোন করে বলেন- কমিটি দেওয়া হবে, কী করলি। আমার কাছে তিনি ২০ লাখ টাকা চাইলে আমি বলি- ভাই এতো টাকা কীভাবে দেব। পরে আমি তাকে ১৫ লাখ টাকা দেই। পটুয়াখালী নেছারিয়া মাদ্রাসার দিকে যেতে হাতের ডানে খান মোশারেফ হোসেনের বাসার সিঁড়িতে বসে তিনি আমার কাছ থেকে টাকা নেন। ১৫ লাখ টাকার মধ্যে পাঁচ হাজার টাকার বান্ডিল ছিল ১২টা, ৫০০ এবং এক হাজার টাকার মিলিয়ে একটি বান্ডিলে ছিল এক লাখ টাকা এবং বাকিগুলো ছিল এক হাজার টাকার বান্ডিল।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, পদ না পেলে অনেকেই অনেক কথা বলেন। একটি কমিটিতে সকলকে সভাপতি-সম্পাদক করা সম্ভব না। আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে কমিটি দেইনি। যারা এসব বলছেন তারা পদ না পেয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব তালুকদার বলেন, টাকা নেওয়ার ঘটনাটি সত্য। আমি আগেই বিষয়টি শুনেছিলাম। কমিটির নাম করে জেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন অনেকের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়েছেন। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর