মানবিক কাজে এগিয়ে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দক্ষিণ এশিয়ার একটি সর্ববৃহৎ ছাত্রসংগঠন। ছাত্রলীগের যেমন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে, ঠিক তেমনি উল্টোটাও আছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম এ সংগঠনের জন্য কখনো কখনো বিব্রত হতে হয়েছে খোদ সরকারকেও। তবে সংগঠনের আদর্শ আর নীতি-নৈতিকতা মেনে অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ।
সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নেতারা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানবিক কর্মকাণ্ডে। কখনো কায়িক শ্রম দিয়ে আবার কখনো অর্থ দিয়ে তারা দাঁড়িয়েছেন হাজার হাজার অসহায় মানুষের পাশে। তারা হাসি ফুটিয়েছেন মাঠের কৃষক থেকে শুরু করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মুখেও।
বিজ্ঞাপন
বর্তমানে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক আর সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন। ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর এই দুই ছাত্রনেতা সংগঠনটির হাল ধরার পর বরগুনায় মানবিকতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা।
দীর্ঘ এই সময়ে সংগঠনটির হাল ধরে থাকা এই দুই কাণ্ডারীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ওঠেনি টেন্ডারবাজি কিংবা চাঁদাবাজিসহ অন্য কোনো অভিযোগ। আধিপত্য বিস্তার, হামলা, পাল্টা হামলা কিংবা নেতৃত্বের টানাপোড়েন অথবা অভ্যন্তরীণ কোনো কোন্দলও সামনে আসেনি আজ পর্যন্ত। অনিক-তানভীর পরিষদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত অভিযোগ তোলেনি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলও।
জানা যায়, বৃক্ষরোপণ অভিযান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ফ্রি চিকিৎসা ক্যাম্প, রক্তদান কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ, রোগীদের মাঝে পুষ্টিকর খাবার ও ফলমূল বিতরণ, রাস্তা সংস্কার ও শীতবস্ত্রসহ কাপড় বিতরণ করে তারা যেমন বরগুনায় সংগঠনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন, ঠিক তেমনি উজ্জ্বল করেছেন খোদ সরকারের ভাবমূর্তিও।
শুধু তা-ই নয়, করোনা মহামারির সময়ে দুবেলা-দুমুঠো খাবার জোগাতে যখন হিমশিম খেয়েছেন হতদরিদ্ররা, তখন ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান অনিক ছাত্রলীগের ব্যানারে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে। দিয়েছেন হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ অন্যান্য নিরাপত্তাসামগ্রীও। এসব কারণে স্থানীয় গরিব ও অসহায় মানুষ আস্থা খুঁজে পেয়েছেন এ সংগঠনের কাছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে। ছোটবেলা থেকে বাবার কাছেই রাজনীতির দীক্ষা পান বনেদি পরিবারের এ সদস্য। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইন সাবেক এক সেনা সদস্যের ছেলে। তিনিও মানবিক ও নৈতিক শিক্ষা পেয়েছেন পরিবার থেকেই।
প্রভাব-প্রতিপত্তি কাজে লাগিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করার সুযোগ থাকলেও তারা তা না করে পাশে দাঁড়িয়েছেন অসহায় ও হতদরিদ্রদের, নির্যাতিত ও নিপীড়িতদের। ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংক ব্যালেন্স না বাড়িয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দিনরাত উজাড় করে তারা মুখ উজ্জ্বল করেছেন ছাত্রলীগের। এসব কারণে স্থানীয়রা মনে করেন, সারা দেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে মডেল বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ।
জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে রিকশাচালক আবুল হোসেনের (৫৬) কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ নাকি পিডাপিডি হরে। আমাগো এহানে তো কোনো পিডাপিডি নাই। আমাগো এহানের ছাত্রলীগ ত্রাণ দেয়, কাফুর দেয়। করোনার সময় আমাগো ছাত্রলীগ ত্রাণ দেছে, তার আগে ও পরে আমাগো কাফুর দেছে। মানে হুদাহুদি ছাত্রলীগের নামে দোষ দেয়।
জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. জহিরুল হক পনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা বাজারে মাঝেমধ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দেখা যায় আগুন নেভাতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আগে এগিয়ে আসেন। তারা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখার পাশাপাশি দমকল বাহিনীকে সহযোগিতা করেন। ফলে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়।
তিনি আরও বলেন, বরগুনা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। বছরে একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখানে আঘাত হানে। দুর্যোগকালীন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে জেলা ছাত্রলীগের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
কথা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হোসাইনের সঙ্গে। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সংগঠনকে গতিশীল করার পাশাপাশি আমাদের ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। সব সময় আমাদের চেষ্টা ছিল বরগুনা জেলা ছাত্রলীগকে ভিন্নভাবে সাধারণ মানুষের কাছে উপস্থাপন করা। আমরা আমাদের কমিটির সব নেতা-কর্মীকে নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে চেষ্টা করেছি সব সময়। তিনি আরও বলেন, মানবিক কাজে আমরা আমাদের নেতা-কর্মীদের সহযোগিতা পেয়েছি সর্বোচ্চ। ফলে আমাদের ভিন্নধর্মী উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিক বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আমরা চেষ্টা করেছি সাধারণ মানুষের পাশে থাকার। চেষ্টা করেছি দেশরত্ন শেখ হাসিনার মুখ উজ্জ্বল করার। এসব দিক বিবেচনায় আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অর্থায়নে অসহায় ও বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি সাধ্য অনুযায়ী। আমাদের কমিটির প্রায় সব সদস্যই মানবিক কর্মী। এসব কর্মীর কারণে আমাদের কাজ অনেক গতিশীল হয়েছে।
ছাত্রলীগের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের দায়িত্ব দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জুবায়ের বলেন, আমরা যে কাজটা করেছি, এ কাজের সুযোগ সবাই পায় না। আবার সুযোগ পেলেও সবাই কাজে লাগাতে পারে না। এ সুযোগ প্রধানমন্ত্রী আমাদের করে দিয়েছেন। তাই আমারা চেষ্টা করেছি তার আস্থার ন্যূনতম প্রতিদান দেওয়ার।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বরগুনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ্ মো. ওয়ালিউল্লাহ ওলি বলেন, বর্তমান বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপশি যে মানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে, এ জন্য তাদের আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের অনুজ হিসেবে তাদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা গর্বিত।
তিনি আরও বলেন, এই কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর বরগুনা ভিন্নি এক ছাত্রলীগের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে যেমন আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে, ঠিক তেমনি উজ্জ্বল হয়েছে খোদ আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখও। মানবসেবা ও নীতিনৈতিকতায় সারা দেশের মধ্যে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগ বিরল এক নজির স্থাপন করেছে।
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, বরগুনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডকে আমি সাধুবাদ জানাই। তাদের এমন কর্মকাণ্ড আগামীর ছাত্রলীগকে মানবিক ছাত্রলীগের পরিণত করতে সহযোগিতা করবে। তাদের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক, এমনটাই প্রত্যাশা আমার।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের জন্য আমার গর্ব হয়। আমার বেশি গর্বের কারণ হচ্ছে এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলাম আমি। নানা প্রতিকূলতার কারণে ছাত্রলীগের পরিচয়ে আমরা যে কাজটি ঠিকঠাক করতে পারিনি, সে কাজটি করে দেখিয়েছে অনিক-তানভীর।
তিনি আরও বলেন, কোনো প্রকার অন্যায় অনিয়মে না জড়িয়ে সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে অনিক-তানভীর পরিষদ আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। জেলা ছাত্রলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড ও ব্যতিক্রমী কাজের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এ সংগঠনের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। ভবিষ্যতেও তারা এমন কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে, এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।
এনএ