৩ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ৩ রকম রিপোর্ট, হতভম্ব রোগী
শারীরিক দুর্বলতার কারণে স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে রোববার (২৫ জুন) রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার জন্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী বাজারের ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান গদখালীর বাবুপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। সেখানে রক্তের হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা করালে রিপোর্টে আসে তার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ৭ দশমিক শূন্য। যেখানে একজন পুরুষের স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা থাকে ১২ দশমিক ৫।
প্যাথলজিকাল রিপোর্ট পেয়ে তিনি শার্শা উপজেলার নাভারণের মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান। সেখানে পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করে তার হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ আসে ১৩ দশমিক শূন্য। দুই জায়গার রিপোর্টের এমন আকাশ পাতাল পার্থক্য দেখে তিনি পুনরায় ঝিকরগাছা বাজারের কপোতাক্ষ প্যাথলজিতে একই টেস্ট করান। সেখান থেকে ১১ দশমিক ১ হিমোগ্লোবিন মাত্রার রিপোর্ট দেওয়া হয়। তিন ক্লিনিকের তিন রকম রিপোর্ট পেয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন সিরাজুল ইসলাম। অতপর তিনি কী করবেন বুঝতে না পেরে বাড়িতে চলে যান।
বিজ্ঞাপন
মানুষ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে যায়। চিকিৎসক চিকিৎসার সুবিধার্থে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন লেখেন। সেই রিপোর্ট যখন ভুল হয় তখন চিকিৎসাও হয় ভুল। আর প্যাথলজিকাল ভুল রিপোর্টের জন্য প্রাণ সংশয়ে পড়তে হয় রোগীদের।
গদখালী বাজারের ফাতেমা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত অক্টোবরে এই প্যাথলজি সেন্টারের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনিই এটি পরিচালনা করেন। কিন্তু রিপোর্টে স্বাক্ষর করার যে যোগ্যতা থাকা দরকার সেই একাডেমিক কোনো সনদ সাদ্দাম হোসেনের নেই। চার বছর ধরে তিনি এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছেন।
প্যাথলজিকাল রিপোর্টের ভুলত্রুটি স্বীকার করে সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমি কাগজপত্র রিনিউ করতে জমা দিয়েছি। এখনো হাতে পাইনি।
নাভারণের মুক্তি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মইনুল ইসলাম মিন্টু বলেন, আমাদের ল্যাবের একজন টেকনিশিয়ান রিপোর্টটা তৈরি করেছেন। একই পরীক্ষার রিপোর্টে এতটা তারতম্য হওয়ার কথা নয়। তবে তিনি তাদের রিপোর্ট ঠিক আছে বলে দাবি করেন।
উক্ত ক্লিনিকের রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী ল্যাব টেকনিশিয়ান মফিজুর রহমান তার পদবিতে কর্মস্থল যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল উল্লেখ করলেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই নামে যশোর জেনারেল হাসপাতালে কোনো ল্যাব টেকনিশিয়ান নেই। তিনিও ভুয়া পদবি ব্যবহার করে প্রতারণায় মেতে উঠেছেন।
ঝিকরগাছা বাজারে অবস্থিত কপোতাক্ষ প্যাথলজির মালিক আব্দুর রশিদ বলেন, ওই রোগীর টেস্ট আমি করেছি। সেখানে রিপোর্ট ১১ দশমিক ১ পাওয়া গেছে। পরীক্ষার ত্রুটি বা কারিগরি কারণে দু-এক পয়েন্ট কমবেশি হতে পারে। তবে একই রিপোর্ট এতটা পার্থক্য হতে পারে না। তিনিও তার প্যাথলজিতে করা রিপোর্ট সঠিক বলে দাবি করেন।
এ ব্যপারে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রশিদুল আলম বলেন, এ ধরনের ঘটনা অমার্জনীয় অপরাধ। যে প্যাথলজি থেকে রিপোর্টগুলো দেওয়া হয়েছে খুব শিগগিরই আমরা এগুলোর পারমিশনসহ সকল কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে সরজমিনে পরিদর্শন করবো। কারও কোনো গাফিলতির প্রমাণ পেলে সেই প্যাথলজি বা ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তিনি জনসাধারণকে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে করার অনুরোধ জানান।
এ্যান্টনি দাস অপু/আরএআর