আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনোদিন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চারটি নির্বাচন হয়েছে। একবার আওয়ামী লীগ সরকারে এসেছে, একবার বিএনপি সরকারে এসেছে। জনগণ মেনে নিয়েছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইন বাতিল করে দিয়ে নিয়ে আসলো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। মানে শেখ হাসিনা সরকারে থেকে নির্বাচন হবে। এরপরের সব নির্বাচনে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আছে। সুতরাং এই সরকার বৈধ সরকার নয়। 

শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে বরিশাল নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের সমাবেশের একটাই উদ্দেশ্য, শেখ হাসিনাকে বিদায় করা। 

তিনি বলেন, বরিশালের মাটি রাজনৈতিক দিক থেকে অনেক ঐতিহ্যবাহী। মুকুন্দ দাসের জন্ম এই বরিশালে। শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক যিনি শুধু বরিশালের নয়, অবিভক্ত বাংলার বীরত্ব লিখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে এই বরিশালে অনেক ত্যাগী বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা অনেক আত্মত্যাগ করেছেন তারাও এই বরিশালের মাটিতে রয়েছেন। আজকে নতুন একটা সংগ্রাম শুরু হয়েছে। এই সংগ্রাম ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। 

মির্জা ফখরুল বলেন, এই মঞ্চে ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খান ও মিরাজের মা কিছুক্ষণ আগে বলে গেছেন, হাসিনা সরকারের সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ২০১২ সালে তার স্কুলে পড়া ছেলে মিরাজ খান, কলেজে পড়া ছেলে ফিরোজ খানকে তুলে নিয়ে গেছে। শুধু এই দুইজন নয় আমাদের ইলিয়াস আলীসহ ৭ শতাধিকের ওপরে নেতাকর্মী গুম করেছে এই সরকার। মিরাজ-ফিরোজর মা, ইলিয়াস আলীর সন্তানরা অপেক্ষায় থাকে এই বুঝি তাদের সন্তান, তাদের বাবা ফিরে এলো। ছোট্ট শিশু সাফা বলেছে, আমি আমার বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতে চাই। ভয়াবহ ফ্যাসিবাদ সরকার এইসব শিশুদেরকে পিতৃহারা করেছে। সরকার মায়েদের কোল খালি করেছে, ভোলার রহিমের স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছে। সমগ্র দেশে এই অবৈধ সরকার শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লুটপাট, চুরি, বিদেশে পাচার করার জন্য এই ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য সারাদেশে ভয়াবহ অত্যাচার-নিপীড়ন করছে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার বলে তাদের অধীনে ভালো নির্বাচন হয়। বরিশাল সিটি নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করলো। আর আমাদের আলেম সাহেব, শ্রদ্ধার মানুষ চরমোনাইয়ের নায়েবে আমিরকে আঘাত করতে পর্যন্ত দ্বিধা করলো না। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা করছে, তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন? এমন নির্বাচন কমিশনার বানিয়েছে শেখ হাসিনা, যিনি (সিইসি) না মরলে শান্তি পান না। 

তিনি বলেন, সরকার বলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানে লেখা আছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কিন্তু সেই জনগণ ভোট দিতে পারে না। দুটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারেনি। জনগণ ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করে যেন সুখে-শান্তিতে থাকতে পারে। অথচ আওয়ামী লীগ নির্বাচন চুরি করার জন্য সকলকে ভোট দেওয়া থেকে বিরত রেখে, নিজেরা সিল মেরে আগের রাতে ভোট শেষ করে বলে ভোট হয়ে গেছে, আমরা জিতে গেছি। আওয়ামী লীগ এমন করে, কারণ তারা জানে সত্যিকারভাবে জনগণ যদি ভোট দিতে পারে তাহলে ১০টি আসনও পাবে না। 

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কী পরিমাণে চুরি করেছে তা চিন্তা করা যায় না। কিছু দিন আগেও খবর বেরিয়েছে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অনেক টাকা জমা। আর বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী যখন সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করে এলেন, তারপর খবর বের হলো সেই সুইস ব্যাংকের টাকা নাকি উধাও হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ জানে, আওয়ামী লীগ শুধু ভোট চোর না এরা সবক্ষেত্র থেকে চুরি করে। সরকার দেশে অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করলো। ঘোষণা দিল ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার। তাহলে এতগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ গেল কোথায়? সরকারের একমাত্র লক্ষ্য চুরি-ডাকাতি করে বিদেশে পাচার করা। 

তিনি আরও বলেন, সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এভাবে আর আমরা মামলা খেতেই থাকবো না। আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। এভাবে আর চলেতে দেওয়া যাবে না। এই ফ্যাসিবাদি সরকারকে পরাজিত করে, জনগণকে জয়ী করে ঘরে ফিরতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে, আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তবেই ঘরে ফিরবো আমরা। 

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর