মেহেরপুরের সব চেয়ে বড় ও মোটাতাজা গরু হিসেবে পরিচিত হলো ‘রাজা বাবু’। জেলার মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালি গ্রামের কৃষক ইনছান আলীর বাড়িতে পালিত রাজা বাবুকে দেখতে ভিড় করে এলাকাবাসী। জেলা ও ঢাকার বাজারে রাজা বাবুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দ্বিতীয়বারের মতো তাকে নেওয়া হয়েছে ঢাকায়। 

বুধবার (২১ জুন) বিকেলে রাজা বাবুকে ঢাকার হাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মালিক কৃষক ইনছান আলী। দীর্ঘদিন সন্তানের ন্যায় লালন-পালন করা রাজা বাবুকে বিদায় করেছে পরিবারের চোখের জলে। তবে খুলনা বিভাগের সব চেয়ে মোটাতাজা গরু হিসেবে রাজা বাবু সেরা হবে বলে দাবি জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের। 

মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের কৃষক ইনছান আলী গত চার বছর আগে মাত্র ৮৫ হাজার টাকায় রাজা বাবুকে ক্রয় করেন। এরপর থেকেই নিজের সন্তানের মত লালন-পালন করে বড় করেছেন রাজা বাবুকে। যার ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মণের উপরে। উচ্চতা প্রায় ৮ ফুট। ফ্রিজিয়াম জাতের এই গরুটির পেছনে প্রতিদিন খরচ হয় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। 

কৃষক ইনছান আলী বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে তাকে দিনে ৩-৪ গোসল করানো হয়। দূর থেকে মনে হয় একটি হাতি দাঁড়িয়ে আছে। গত বছর ভালো দাম পেয়েও রাজা বাবুকে বিক্রি করিনি। দেশ সেরা ও বড় গরুর তকমা পাবার আশায়। কালো রংয়ের এই গরুটি ৩০ লাখ টাকায় বিক্রির আশা করছি। দ্বিতীয়বারের মতো রাজা বাবুকে নেওয়া হচ্ছে ঢাকায়। আসন্ন ঈদুল আজহায়  ঢাকার বাজারেও দেশ সেরা গরুর খ্যাতি অর্জন করবে বলে আশা করছেন কৃষক ইনছান আলী।

তিনি আরও বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদের আগে রাজা বাবুকে ঢাকার বাজারে তোলা হয়েছিল। গত বছর রাজা বাবুর দাম উঠেছিল ১৩ থেকে ১৪ লাখ টাকা। এ বছর তার দাম ধরেছেন গেল বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ন্যায্যমূল্য না পেলে লোকসান হবে বলেও আশঙ্কা ওই কৃষকের।

কৃষক ইনছান আলীর স্ত্রী শঅহিনা আক্তার বলেন, নিজের সন্তানের প্রতি যতটুকু যত্ন নিয়েছি তার চেয়ে বেশি যত্ন নিতে হয়েছে রাজা বাবুর প্রতি। চারটি বছর তাকে নিজের হাতে লালন পালন করেছি। কখনও বিরক্ত হয়নি। রাজা বাবুর যত্নে আমার নাওয়া খাওয়ার ঠিক ছিল না। দেশের সব চেয়ে বড় গরু হিসেবে স্বীকৃতি পেলে আমার পরিশ্রম স্বার্থক হবে। রাজা বাবুকে বিদায়ের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন গৃহিনী শাহিনা আক্তার।

ইনছান আলীর মেয়ে সবনম বলেন, গরু হলে কি হবে? রাজা বাবু ছিল আমাদের পরিবারের একজন। আমরা সার্বক্ষণিক তাকে খাওয়ানো, গোসল করানো নিজ হাতে করেছি। আমার বাবা একজন কৃষক। সব সময় মাঠের কাজে ব্যস্ত থাকেন। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে রাজা বাবুর যত্ন নিতাম। গায়ে হাত বুলিয়ে মুখ নেড়ে রাজা বাবুর বিদায় বেলা হয়ে ওঠে পরিবারের কাছে মূল্যবান।  

প্রতিবেশী ইদ্রিস আলী জানান, একটি গরু লালন-পালন করতে অনেক টাকা খরচ হয়। ইনছান আলীও সেভাবেই গরুটির পেছনে খরচ করেছেন। ন্যায্য দাম না পেলে তার লোকসান হবে। লাভ ও লোকসান যায় হোক ইনছান আলীর স্বপ্ন শুধু নিজের জেলা নয়, দেশ সেরা হবে রাজা বাবু।

মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে এবছর কোরবানির যোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার ৫২০টি। এর মধ্যে কোরবানি যোগ্য ষাঁড় ৪২ হাজার ৭২৫টি, বলদ ৫ হাজার ৯২৫টি, গাভী ১০ হাজার ২১৬টি, মহিষ ৫৯৬টি, ছাগল ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৯টি এবং ভেড়া রয়েছে ২ হাজার ৮৯০টি। প্রাণিসম্পদের দেওয়া তথ্যে জেলার চাহিদার চেয়ে দেড়গুণ পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। 

মেহেরপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা আশা করছি খুলনা বিভঅগের সব চেয়ে বড়[ ও মোটাতাজা গুরু হিসেবে স্বীকৃতি পাবে ইনছান আলীর রাজা বাবু। আমরা চাই ওই কৃষক তার পরিশ্রমের ন্যায্য মূল্য পাবে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে ইনছান আলী তার গরুটিকে মোটাতাজা করে বড় করেছেন। আমরা তাকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছি। শুধু ইনছান আলীই নয়, জেলার অনেকেই গরু মোটাতাজাকরণের দিকে ঝুঁকছে। ২০২২ সালে মেহেরপুর জেলায় কোরবানি যোগ্য গবাদি পশুর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬টি। এবছর তা অনেক বেড়েছে।  

আকতারুজ্জামান/আরকে