কুড়িগ্রামে ভেঙে গেছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, লোকালয়ে ঢুকছে পানি
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের তেলিয়ানী পাড়ায় দুধকুমার নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবেদ আলী জানান, মঙ্গলবার বিকেল থেকে তেলিয়ানীতে তার বাড়ির পাশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর দিয়ে দুধকুমার নদের পানি লোকালয়ে ঢুকতে থাকে। ক্রমেই স্রোতের তীব্রতা বাড়তে থাকে। বড় বড় গর্ত হয়ে তলিয়ে যেতে থাকে বাঁধে থাকা জিও ব্যাগ। এক সময় স্রোতের তীব্রতায় ভেঙে যায় প্রায় ২৫০ মিটার বাঁধ।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিন দেখা গেছে, বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে তীব্র বেগে লোকালয়ে ঢুকছে পানি। বৃষ্টির জমা পানিতে তা যোগ দিয়ে প্লাবিত করেছে বামনডাঙ্গার তেলিয়ানী, মালিয়ানী, বড়মানি, ধনিটারী, অন্তাইপাড়, সেনপাড়া, পাটেশ্বরী, বোয়ালেরডারা, পৌরসভার পূর্ব সাঞ্জুয়ারভিটাসহ বিস্তৃর্ণ এলাকা। ইতোমধ্যে ভেসে গেছে এসব এলাকার বেশ কয়েকটি পুকুর। পানি যেভাবে প্রবেশ করছে তাতে বন্যার আকার বাড়তে পারে। প্লাবিত হতে পারে এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা জাহান, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমরা মূলত নদীর স্থায়ী ভাঙন রোধে কাজ করছি। এমতাবস্তায় বাঁধের কিছু নিচু জায়গা দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। সে জায়গায় জিও ব্যাগ, জিও টিউব, বোল্ডার ফেলে উঁচু করা হচ্ছে। যাতে নদীর পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকতে না পারে।
এদিকে প্রধান প্রধান নদ-নদীর পনি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বুধবার (২১ জুন) বিকেল ৩টায় দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বাড়ায় আগেই উপজেলার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাড়ির চারপাশে পানি উঠে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে সবজি ক্ষেত, আমনের চারা ও পাট ক্ষেত।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৯৯ মিলিমিটার এবং পরবর্তী ৬ ঘণ্টায় আরও ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী আগামী ২২ ও ২৩ জুন প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করার করতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বন্যা হওয়ার শঙ্কা নেই বলে জানান তারা।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা মোকাবিলার সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলায় ৫৪১ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার মজুত রয়েছে। যেখানে প্রয়োজন হবে তাৎক্ষণিকভাবে বিতরণ করা হবে।
জুয়েল রানা/আরএআর