নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি। রোদ কিংবা বৃষ্টিতে নেই লোডশেডিং। হাতিয়া ও নিঝুম দ্বীপের বাসিন্দারা ২৪ ঘণ্টাই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। 

সরেজমিনে হাতিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যুতের লোডশেডিং নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো আলোচনা নেই। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা এই দ্বীপে মানুষ সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ পেয়ে মহাখুশি। বেড়িবাঁধের ওপরে, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোট-বড় হাঁট-বাজার এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। 

জানা গেছে, ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি ৩৮৪ কোটি ৩৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে হাতিয়া-নিঝুম দ্বীপটিকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছে। প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘হাতিয়া দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ ও কুতুবদিয়া দ্বীপ শতভাগ নির্ভরযোগ্য ও টেকসই বিদ্যুতায়ন’। বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিউবো)। উৎপাদনের জন্য চুক্তি করা হয় দেশ এনার্জি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির সঙ্গে। তারা প্রাথমিকভাবে ১৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্ল্যান্ট তৈরি করেছে হাতিয়ায়। এ জন্য সরকারিভাবে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের হরেন্দ্র মার্কেটের কাছে ১৬ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিয়ায় তিনটি নতুন ৩৩/১১ কেভি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এছাড়া মূল হাতিয়ায় নতুন ৪৬৫ কিলোমিটার ও নিঝুম দ্বীপে ৪৭ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করা হয়। নিঝুম দ্বীপ হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হাতিয়ার মোক্তারিয়া ঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপ খাল পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার ১১ কেভি সাবমেরিন কেবল স্থাপন করা হয়। 

হাতিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা খামারি মো. নুরুজ্জামান। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাওয়ায় মহাখুশি নুরুজ্জামান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়ায় আমরা খামারিরা মহাখুশি। আগে জেনারেটরের মাধ্যমে খামারে তেল খরচ হতো ৩০ হাজার টাকা। এই এলাকার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। 

হাতিয়ার বাসিন্দা মো. বাহার উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা বাংলাদেশের অনেক স্থানে লোডশেডিং হচ্ছে কিন্তু হাতিয়ায় কোনো লোডশেডিং নাই। আমরা হাতিয়ার মানুষ ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই। আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমাদের হাতিয়ার বর্তমান এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী কৃতিত্বের দাবিদার। 

তাকওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী ফয়েজ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিয়মিত কাজ করতে পারছি। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের আত্মীয় স্বজন একেকজন একেক জায়গায় থাকেন। সবার কম বেশি লোডশেডিং হলেও আমাদের হাতিয়ায় কোনো লোডশেডিং নেই। আমার ওয়ার্কশপে ২৪ ঘণ্টা কাজ করা যাচ্ছে।

ওয়ার্কশপের শ্রমিক খান সাহেব ঢাকা পোস্টকে বলেন, একসময় হাতিয়া ছিল অন্ধকারে তখন সারাদেশ আলোকিত ছিল। বর্তমানে সারাদেশে লোডশেডিং হলেও হাতিয়া আলোকিত। আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছি। 

পৌরসভার বাসিন্দা মালেকা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের বিদ্যুৎ দিসে। আমরা ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাই, কোনো লোডশেডিং নাই। 

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাতিয়াবাসীর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রুপ নিয়েছে। সারাদেশের তুলনায় ভিন্ন হাতিয়া। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে দ্বীপবাসীর। আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, হাতিয়ার সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সাহেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

হাতিয়া বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (বিপিডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শতভাগ বিদ্যুতায়নের স্বপ্নে হাতিয়া নিঝুমদ্বীপে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা পাচ্ছে। মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ মানুষ আবাসিক ও বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ সেবার আওতায় এসেছে। ক্রমান্বয়ে সবাইকে সেবার আওতায় আনা হচ্ছে। পুরো দ্বীপ আলোকিত হলে দ্বীপবাসী নানামুখী সুবিধা ভোগ করবে।

হাসিব আল আমিন/আরকে