ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, হাবিবুল আউয়ালের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হওয়ার মতো যোগ্যতা নেই। সরকার জানে তাদের ভোট নেই, তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। সিইসি লাশের ওপর দিয়ে নৌকার বিজয় চেয়েছিল। তা না হলে মুফতি ফয়জুল করীমের মৃত্যু কামনা করতে পারতো না।

শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে বরিশাল নগরীর অশ্বিনী কুমার হলের সামনে সদর রোডে বিক্ষোভ ও সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, দেশ আজকে হুমকির পথে। দেশ স্বাধীন করতে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছিল। আর আজকে দেশ পরদেশের তাবেদারিতে চলে গেছে। বিদেশ থেকে যেভাবে সিদ্ধান্ত হয় আমাদের বাংলাদেশে সেভাবে বাস্তবায়ন করে। আমরাও কিন্তু দেশের জন্য রক্ত দিয়েছি। আলেমদের ওপর আঘাত করলে, ঈমানি শক্তিকে উৎখাত করার চেষ্টা করা হলে আরেকটা স্বাধীনতা যুদ্ধ অবধারিত হয়ে যাবে।

চরমোনাই পীর বলেন, মেয়র পদের সম্মানের জন্য সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিনি। এই মেয়র পদের চেয়ে শত শত গুণ সম্মান আল্লাহ আমাদের দান করেছেন। বরিশালে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির আমার ছোট ভাইকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম, যেহেতু আমাদের বাড়ি বরিশাল সদরে। আমরা নির্বাচনে এসেছিলাম মানুষ যেন স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারে, তাদের অধিকারটুকু বুঝে পায়, তাদের খাদেম হিসেবে কাজ করার জন্য। অথচ বরিশাল সিটি নির্বাচনে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন যা করে দেখিয়েছে তা সারা দুনিয়ার মধ্যে ইতিহাস হয়ে থাকবে। নির্বাচনে মুফতি ফয়জুল করীমের ওপর আক্রমণ হয়নি বরং আক্রমণ হয়েছে সারা দুনিয়ার আলেমদের ওপরে। বরিশাল সদরেই আমাদের বাড়ি, আমরা পানির স্রোতে ভেসে আসিনি। সরকারকে আমি বলতে চাই, আপনারা ফেরাউনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আপনারা আবু জেহেলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

মুফতি রেজাউল করীম বলেন, মুফতি ফয়জুল করীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল। এর সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। সরকার এক যুগ ধরে নির্বাচন ব্যবস্থাকে হত্যা করেছে। যার সর্বশেষ নজির দেখা গেছে বরিশালে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী দেশের বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমকে দফায় দফায় রক্তাক্ত করা হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের শুরু থেকে শেষ সর্বত্র হিংস্রতা কত বিভৎস আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তার একটি নজির এই হামলা। এমনতর হামলার শিকার যেন দেশের আর কোনো নাগরিক না হন তা নিশ্চিতকল্পে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অবসান চাই। 

তিনি বলেন, দেশে কোনো সরকার নেই। যারা আছে তারা বৈধ সরকার নয়।

চরমোনাই পীর বলেন, এই সরকার সাংবিধানিক পদগুলোতে দলীয় ও মেরুদণ্ডহীন অন্ধ আনুগত্যের লোকজন বসিয়েছে তা জানা ছিল। কিন্তু হাবিবুল আউয়ালের মতো একজন বিকারগ্রস্ত লোককেও যে সিইসির মতো দায়িত্বে এনেছে তা ভাবনাতীত। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী একজন প্রার্থীর মৃত্যু কামনা করে যে লোক, তাকে আর এক মুহূর্তের জন্যও সাংবিধানিক দায়িত্বে দেখতে চাই না। অবিলম্বে এই লোককে সিইসির পদ থেকে ছুড়ে ফেলতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না। এমনকি অন্য কোনো দলেরও উচিত হবে না এই আজ্ঞাবহ কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার।

ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি সৈয়দ নাসির আহমাদ কাওছারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল হুদা ফয়েজী, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি সৈয়দ নূরুল করীম, চরমোনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ জিয়াউল করীম, জাগুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুফতি হেদায়াতুল্লাহ আজাদী প্রমুখ।

এর আগে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি সফল করতে জুমার নামাজের পর থেকেই সদর রোডে জমা হতে থাকেন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা। সমাবেশ শুরুর আগেই জেল খানার মোড় থেকে কাকলির মোড় পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক নেতাকর্মীতে পূর্ণ হয়ে যায়।

নেতাকর্মীরা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ছবি সম্বলিত ব্যানারে জুতা নিক্ষেপ ও কুশপুতুলে জুতা নিক্ষেপ করেন। এছাড়া কফিনে করে প্রধান নির্বাচন কমিশনের ছবি সম্বলিত প্রতিকী মরদেহ সমাবেশস্থলে নিয়ে আসা হয়। যার গায়ে লেখা ছিল ইন্তেকাল কমিশন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর